Friday, 23 May 2025

"প্রার্থনা"

বিদ্যাপতির "প্রার্থনা" কবিতাটি একটি গম্ভীর, ভক্তিমূলক কবিতা, যেখানে কবি পরম করুণাময় ভগবান বিষ্ণুর প্রতি নিজের অন্তরের আকুলতা ও বিনম্র নিবেদন প্রকাশ ক

 "প্রার্থনা"

প্রার্থনা



কবি: বিদ্যাপতি

বিষয়বস্তু: ঈশ্বরের প্রতি অনুতপ্ত হৃদয়ে প্রার্থনা

প্রকাশভঙ্গি: ভক্তিমূলক আত্মোপলব্ধিমূলক

সারাংশ

বিদ্যাপতির "প্রার্থনা" কবিতাটি একটি গম্ভীর, ভক্তিমূলক কবিতা, যেখানে কবি পরম করুণাময় ভগবান বিষ্ণুর প্রতি নিজের অন্তরের আকুলতা বিনম্র নিবেদন প্রকাশ করেছেন। এটি মূলত একটি আত্মোপলব্ধিমূলক কাব্য, যেখানে একজন সাধারণ মানুষের পাপবোধ, জীবনের ক্লান্তি এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে।

মূল ভাব বিশ্লেষণ:


কবিতায় কবি নিজের জীবনের দুর্বলতা, অজ্ঞতা মোহগ্রস্ত অবস্থার কথা অকপটে স্বীকার করে ভগবানের করুণা ভিক্ষা করছেন। তিনি বলেন, জন্ম থেকে আজ অবধি তিনি ভগবানকে ভুলে গেছেন, সংসারের মায়া-মোহে আটকে পড়েছেন, কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পেরেছেনসেই ভগবানই একমাত্র আশ্রয়। কবি অনুতপ্ত হৃদয়ে ভগবানের প্রতি আর্তি জানাচ্ছেন যেন তিনি তাঁকে ক্ষমা করেন এবং তাঁর চরণে ঠাঁই দেন।

আত্মদর্শন পাপবোধ:

কবিতার সূচনাতেই কবি অকপটে স্বীকার করেন, জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত তিনি ঈশ্বরের কথা ভুলে গেছেন। সংসারের মোহ, কামনা, লোভ অহংকারে তিনি এতটাই নিমজ্জিত ছিলেন যে ঈশ্বরের চিন্তা তাঁর জীবনে কোনো স্থান পায়নি। কিন্তু এখন, জীবনের অন্তিম প্রান্তে এসে কবি উপলব্ধি করেছেন যে, এই পৃথিবীর সবকিছু ক্ষণস্থায়ী।

ঈশ্বরই একমাত্র আশ্রয়:

কবি বুঝতে পেরেছেন, সংসার তাঁকে কিছুই দিতে পারেনিশান্তি নয়, মুক্তিও নয়। জীবনের সকল মোহমায়া শেষ হয়ে গেছে, এখন তিনি পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরকেই একমাত্র পথ বলে মনে করছেন। তিনি ঈশ্বর বিষ্ণুর শরণাগত হচ্ছেন এবং ভক্তিভরে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন।

অনুতাপ নিবেদন:

বিদ্যাপতি বলেন, তিনি জানেন তিনি অনেক পাপ করেছেন, কিন্তু তবু ঈশ্বর যেন তাঁকে পরিত্যাগ না করেন। তিনি ঈশ্বরের চরণে নিজেকে সঁপে দিতে চান। তাঁর কণ্ঠে এক গভীর অনুশোচনা এবং করুণ আর্তি প্রতিধ্বনিত হয়যা প্রতিটি মানুষ জীবনের একসময়ে অনুভব করে, বিশেষত যখন সে নিজের ভুলগুলো উপলব্ধি করতে শেখে।

 

গভীরতা:

এই কবিতার মাধ্যমে কবি বিদ্যাপতি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় ভাবনাই প্রকাশ করেননি, বরং মানব জীবনের গভীর দার্শনিক চিন্তাকেও তুলে ধরেছেন। মানুষ যখন নিজের ভুল বুঝতে পারে, তখনই তার মধ্যে সত্যিকারের আত্মজিজ্ঞাসা ঈশ্বরের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়।

উপসংহার:

"প্রার্থনা" কবিতাটি এক অন্তর্মুখী যাত্রার কাব্যিক রূপ। বিদ্যাপতির সরল অথচ হৃদয়স্পর্শী ভাষায় এই কবিতা আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ভক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করায়। প্রার্থনাশুধুমাত্র একটি ভক্তিমূলক কবিতা নয়, এটি এক গভীর আত্মজিজ্ঞাসার কাব্য। বিদ্যাপতির সরল, স্নিগ্ধ ভাষায় রচিত এই কবিতা পাঠকদের আত্মদর্শনের দিকে নিয়ে যায়। এটি জীবনের অপারগতা, ঈশ্বরের করুণা, এবং মুক্তির পথকে কেন্দ্র করে গঠিত। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও এই কবিতা মানুষকে আত্ম-অনুসন্ধানের প্রেরণা জোগায়।


ভক্তিভাব সার্বজনীনতা:

এই কবিতায় শুধু একজন ভক্তের প্রার্থনাই নয়, বরং সমস্ত মানুষেরই এক সাধারণ মানসিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। মোহ ভ্রান্তির মধ্যে দিন কাটানোর পর, মানুষ যখন জীবনের সত্য উপলব্ধি করে, তখন সে ঈশ্বরের শরণ নেয়। বিদ্যাপতির কাব্যিক ভাষায় সেই চিরন্তন সত্য ফুটে উঠেছে।

 

মূল ভাব

·         জীবনের ভ্রান্ত পথ থেকে ফিরে এসে ঈশ্বরের শরণ নেওয়ার আকুতি।

·         মানুষের আত্মজিজ্ঞাসা ঈশ্বরভক্তির প্রতিফলন।

·         মোহময় সংসার থেকে মুক্তির প্রার্থনা।

 

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট

·         কবি বিদ্যাপতি একজন বৈষ্ণব কবি, তাঁর কবিতায় ভক্তিভাব গভীর।

·         কবিতায় কবি বলেন, তিনি সংসারের মোহে ঈশ্বরকে ভুলে গেছেন।

·         কবি ঈশ্বর বিষ্ণুর করুণার আশায় প্রার্থনা করেন।

·         অনুশোচনা আত্মসমর্পণের মাধ্যমে মুক্তি কামনা করা হয়েছে।

·         কবিতা থেকে মানব জীবনের শিক্ষা: আত্মদর্শন ঈশ্বরবিশ্বাস।

 

কবি পরিচিতি:

বিদ্যাপতি মধ্যযুগের একজন বিখ্যাত বৈষ্ণব কবি, যিনি মূলত মৈথিলি ভাষায় রচনা করতেন, তবে বাংলাতেও তাঁর প্রভাব বিশাল। তাঁর কবিতাগুলিতে প্রেম ভক্তিএই দুই প্রধান ধারা প্রবাহিত হয়েছে। "প্রার্থনা" কবিতাটি ভক্তিমূলক ধারায় রচিত, যেখানে একজন সাধারণ মানুষের আত্মোপলব্ধি, অনুতাপ এবং ঈশ্বরের প্রতি আকুল নিবেদন গভীরভাবে ব্যক্ত হয়েছে।

 

 

Rajesh Konwar

Author & Editor

Has laoreet percipitur ad. Vide interesset in mei, no his legimus verterem. Et nostrum imperdiet appellantur usu, mnesarchum referrentur id vim.

0 comments:

Post a Comment