পরিচিতি
ও প্রেক্ষাপট:
‘গ্রাম্যছবি’ কবিতাটি বিশিষ্ট কবি গিরিন্দ্র মোহিনী
দাশীর
রচনা।
তিনি
বাংলা
সাহিত্যের প্রথমদিকের মহিলা
কবিদের
একজন।
তাঁর
রচনায়
গ্রামীণ জীবনের
সহজ-সরল সৌন্দর্য, প্রকৃতির মায়া,
এবং
মননশীলতা গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়।
এই
কবিতায় কবি
এক
সরল
গ্রাম্য দৃশ্যপট তুলে
ধরেছেন,
যেখানে
গ্রামের নিসর্গ,
কৃষকের
জীবনযাপন, প্রকৃতির রূপ
ও
শিশুদের সরলতা
অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভঙ্গিতে চিত্রিত হয়েছে।
মূলভাব:
‘গ্রাম্যছবি’ কবিতাটি মূলত একটি গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও
সামাজিক পরিবেশের চিত্র
তুলে
ধরে।
কবি
গ্রামের জীবনযাত্রার সরলতা,
প্রকৃতির মাধুর্য, কৃষকের
কর্মব্যস্ততা এবং
শিশুমনের আনন্দ-আবেশকে এক চিত্রপটের মতো
পাঠকের
সামনে
উপস্থাপন করেন।
এটি
যেন
একটি
জীবন্ত
ছবি
— যেখানে
পাঠক
যেন
চোখের
সামনে
গ্রামটির প্রতিটি দৃশ্য
দেখতে
পান।
বিস্তারিত
বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ:
১. প্রকৃতির
রূপ ও আবহ:
- কবিতা শুরু হয় গ্রামের এক শান্ত সকালে।
- শিশিরভেজা ঘাস, পাখির কূজন, এবং কোমল আলোতে নরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা রয়েছে।
- সূর্যের আলো আস্তে আস্তে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে — এক মনোরম প্রভাতের অনুভূতি।
- প্রকৃতি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে: গাছের পাতায়, জলধারায়, মাঠে।
২. কৃষকের
জীবন:
- কৃষকেরা সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে কাজ করতে চলে যাচ্ছে।
- মাথায় কাস্তে, কাঁধে হাল, চাষের উপকরণ — এক সংগ্রামী অথচ অভ্যস্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি।
- তারা কঠোর পরিশ্রম করে, কিন্তু মন থেকে খুশি — এ এক অন্যরকম তৃপ্তির ছবি।
৩. শিশু ও গ্রামীণ
জীবনচিত্র:
- গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গাছতলায় খেলা করছে, পাখি ধরছে, নদীর পাড়ে জল ছিটিয়ে দিচ্ছে।
- এদের সরলতা, দুষ্টুমি এবং আনন্দে ভরা মনোভাব কবির চোখে বিশেষভাবে ধরা পড়েছে।
- এই শিশুদের মধ্যে প্রকৃতির সঙ্গে এক সহজাত সংযোগ রয়েছে — তারা যেন প্রকৃতিরই অংশ।
৪. গৃহস্থালি
ও সামাজিক পরিবেশ:
- গৃহবধূদের ঘরের কাজ, কুয়ো থেকে জল তোলা, গোয়ালঘরের কাজ — এসবও কবি নিপুণভাবে এঁকেছেন।
- সমাজে পারস্পরিক সহানুভূতি ও
সাহায্য করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।
- পল্লির আত্মিক বন্ধন, মায়াময়তা এবং শান্তির আবহ পুরো কবিতাটিকে ঘিরে রয়েছে।
শৈলী ও ভাষা:
- কবিতাটি বর্ণনামূলক এবং চিত্রাত্মক — যেন কবি একজন চিত্রশিল্পীর মতো শব্দের তুলিতে একটি গ্রাম্য দৃশ্য এঁকে দিয়েছেন।
- ভাষা সহজ, মধুর ও
স্বচ্ছ — গ্রামীণ রূপকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।
- অলংকারের ব্যবহারে কবিতা আরও সজীব হয়েছে (উদাহরণ: উপমা, রূপক, অনুপ্রাস)।
- ছন্দ ও
রসের সৌন্দর্যে কবিতাটি এক আবেগঘন অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
কবির দৃষ্টিভঙ্গি
ও বার্তা:
- কবি গ্রামকে কেবল একটি স্থান হিসেবে দেখেননি, বরং একটি আবেগ, এক শুদ্ধ জীবনপ্রবাহ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
- আধুনিক জীবনের কোলাহল থেকে দূরে, এই গ্রামীণ শান্তি ও
সরলতার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত — এটি কবির আন্তরিক উপলব্ধি।
- আমাদের সমাজে প্রায়ই অবহেলিত গ্রামীণ জীবনই আসলে প্রকৃত সভ্যতার শিকড় — এই মর্মবাণী ফুটে ওঠে কবিতায়।
মূল শিক্ষণীয়
দিক:
- প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধনের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
- গ্রামের মানুষের শ্রম, সরলতা, এবং শান্তির প্রশংসা করা হয়েছে।
- আধুনিক জীবনের কৃত্রিমতার মধ্যে এই কবিতা এক টুকরো নির্মল প্রশান্তি এনে দেয়।
উপসংহার:
‘গ্রাম্যছবি’ কেবল একটি কবিতা
নয়,
এটি
একটি
প্রাণবন্ত অনুভূতির নাম
— যেখানে
পাঠক
শুধু
গ্রাম
দেখেন
না,
বরং
সেই
গ্রামীণ জীবনকে
অনুভব
করেন।
গিরিন্দ্র মোহিনী
দাশীর
কলমে
বাংলা
সাহিত্য পেয়েছে
এক
অনন্য
গ্রামীণ চিত্রপট, যা
আজও
সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, মনোজ্ঞ
ও
হৃদয়গ্রাহী।
বহু নির্বাচনী প্রশ্নোত্তর:
১. 'গ্রাম্যছবি' কবিতাটির রচয়িতা কে?
ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খ) গিরিন্দ্র মোহিনী দাশী ✅
গ) জীবনানন্দ দাশ
ঘ) কুমুদরঞ্জন মল্লিক
২. 'গ্রাম্যছবি' কবিতায় বর্ণিত হয়েছে—
ক) শহরের দৃশ্য
খ) পাহাড়ি পরিবেশ
গ) গ্রামের চিত্র ✅
ঘ) যুদ্ধক্ষেত্র
৩. কবিতাটির প্রেক্ষাপট কোন সময়ের?
ক) দুপুর
খ) রাত
গ) সন্ধ্যা
ঘ) সকাল ✅
৪. গ্রামের শিশুদের আচরণ কেমন?
ক) ভয়ানক
খ) নিষ্ঠুর
গ) সরল ও প্রাণবন্ত ✅
ঘ) দুঃখী
৫. ‘হাল’ কার কাজের সঙ্গে জড়িত?
ক) ডাক্তার
খ) শিক্ষক
গ) কৃষক ✅
ঘ) সেবিকা
৬. গ্রামের গৃহস্থ নারীরা কোথা থেকে জল তোলে?
ক) নদী
খ) পুকুর
গ) কুয়ো ✅
ঘ) কল
৭. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতায় প্রকৃতিকে কেমনভাবে দেখা হয়েছে?
ক) শত্রু
খ) জীবন্ত ও মায়াবী ✅
গ) নিষ্ঠুর
ঘ) কৃত্রিম
৮. কৃষকেরা কী নিয়ে মাঠে যায়?
ক) খাতা
খ) গান
গ) কাস্তে ও হাল ✅
ঘ) তরবারি
৯. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতার প্রধান থিম কী?
ক) শিল্প
খ) রাজনীতি
গ) প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবন
✅
ঘ) অর্থনীতি
১০. কবিতায় পাখিরা কী করছে?
ক) ঘুমাচ্ছে
খ) কাঁদছে
গ) কূজন করছে ✅
ঘ) উড়ছে না
১১. কবিতায় শিশুদের আনন্দ কোথায় প্রতিফলিত হয়?
ক) ক্লাসরুমে
খ) প্রকৃতির মাঝে ✅
গ) শহরের মেলায়
ঘ) খেলাঘরে
১২. কবির ভাষা কেমন?
ক) দুর্বোধ্য
খ) কঠিন
গ) সহজ ও মধুর ✅
ঘ) রূঢ়
১৩. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতাটি কোন ধরনের রচনা?
ক) নাট্যরচনা
খ) কাব্য ✅
গ) উপন্যাস
ঘ) প্রবন্ধ
১৪. কবি গ্রামের কিসে আকৃষ্ট?
ক) যানজটে
খ) শিশুর কান্নায়
গ) প্রকৃতির শান্ত রূপে ✅
ঘ) রাজনৈতিক আলোচনায়
১৫. কৃষকের পরিশ্রম কেমনভাবে চিত্রিত হয়েছে?
ক) হতাশাজনক
খ) সার্থপর
গ) গর্বের ও আন্তরিক ✅
ঘ) অমানবিক
১৬. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতার প্রকৃতি কেমন?
ক) ধ্বংসপ্রবণ
খ) কুৎসিত
গ) সৌন্দর্যময় ✅
ঘ) নিষ্প্রাণ
১৭. কবিতায় সূর্যোদয়ের বর্ণনা কী প্রকাশ করে?
ক) এক অস্থিরতা
খ) প্রকৃতির জাগরণ ✅
গ) নৈরাশ্য
ঘ) নিস্তব্ধতা
১৮. শিশুদের খেলার স্থান কোথায়?
ক) মাঠ ও গাছতলা ✅
খ) ক্লাসরুম
গ) মঞ্চ
ঘ) বাজার
১৯. কবি গ্রামকে কী রূপে দেখিয়েছেন?
ক) কষ্টের স্থান
খ) পলায়নপর
গ) শান্তির আবাস ✅
ঘ) যান্ত্রিক সমাজ
২০. কবিতাটিতে কোন একটি বিষয় নেই?
ক) প্রকৃতি
খ) প্রযুক্তি ✅
গ) শিশু
ঘ) কৃষক
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর – ২০টি
১. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতাটি কে রচনা করেন?
উ: গিরিন্দ্র মোহিনী দাশী।
২. কবিতার শুরুর সময় কোনটি?
উ: সকালবেলা।
৩. গ্রামের শিশুরা কোথায় খেলে?
উ: গাছতলা, নদীর পাড়, মাঠে।
৪. কবিতায় কোন পাখির কূজনের কথা বলা হয়েছে?
উ: নাম নির্দিষ্ট নয়, তবে পাখির কূজনের মাধ্যমে প্রভাত বর্ণিত হয়েছে।
৫. গৃহস্থ নারীরা কী কাজ করে?
উ: ঘরকন্না, কুয়ো থেকে জল তোলা, গোয়ালঘরের কাজ ইত্যাদি।
৬. কবি গ্রামের প্রকৃতিকে কেমনভাবে দেখেছেন?
উ: শান্ত, সৌন্দর্যময়, মায়াবী রূপে।
৭. ‘হাল’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উ: চাষের কাজে ব্যবহৃত একটি উপকরণ।
৮. শিশুদের আচরণ কেমন?
উ: সরল, প্রাণবন্ত ও আনন্দময়।
৯. কবিতা কোন ধরনের চিত্র তুলে ধরে?
উ: গ্রামীণ জীবনচিত্র।
১০. কৃষকেরা কোন সময় মাঠে যায়?
উ: সকালে সূর্য উঠার পর।
১১. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতায় কবি কী প্রকাশ করতে চেয়েছেন?
উ: গ্রামের সরলতা, প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং মানুষের পরিশ্রম।
১২. গ্রামের প্রকৃতিতে কী ধরনের আবহ থাকে?
উ: শান্ত ও মনোরম।
১৩. গ্রামের শিশুরা কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকে?
উ: খেলাধুলা, পাখি ধরা, নদীতে জল ছিটানো ইত্যাদির মাধ্যমে।
১৪. কবি গ্রামকে কী রূপে দেখেন?
উ: এক নির্মল ও শান্তিময় স্থান হিসেবে।
১৫. কবিতার ভাষা কেমন?
উ: সহজ ও বর্ণনামূলক।
১৬. গ্রামীণ জীবন কীভাবে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ?
উ: এটি আমাদের সংস্কৃতির শিকড় ও প্রকৃত মানবিকতার প্রতীক।
১৭. কবি কীভাবে শিশুর দুষ্টুমি বর্ণনা করেছেন?
উ: তারা পাখি ধরে, জল ছিটায় — এসব সরল আনন্দে।
১৮. গৃহবধূদের কাজের মাধ্যমে কী ফুটে ওঠে?
উ: তাদের পরিশ্রম ও পারিবারিক দায়িত্ববোধ।
১৯. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতার প্রকৃতি ও মানুষ কেমনভাবে সম্পর্কিত?
উ: একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
২০. কবিতার মূল বার্তা কী?
উ: প্রকৃত আনন্দ ও সৌন্দর্য গ্রামীণ জীবনের সরলতায় নিহিত।
রচনামূলক প্রশ্নোত্তর:
১। প্রশ্ন: ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতার সারাংশ লেখ।
উত্তর:
‘গ্রাম্যছবি’ কবিতাটি গিরিন্দ্র মোহিনী দাশী রচিত এক চিত্রময় কবিতা,
যেখানে তিনি এক প্রভাতের গ্রাম্যজীবনের
নানান দৃশ্য সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। কবিতায় গ্রাম্য প্রকৃতির মাধুর্য, পাখির কূজন, শিশিরভেজা ঘাসের নরম পরশ, এবং কৃষকদের কর্মব্যস্ততা প্রাণবন্তভাবে চিত্রিত হয়েছে। এছাড়াও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খেলার দৃশ্য, গৃহবধূদের ঘরের কাজ — সব মিলিয়ে কবি
যেন একটি জীবন্ত ছবিই এঁকেছেন। এই কবিতায় গ্রাম্য
জীবনের শান্তি, সরলতা ও প্রকৃতির সঙ্গে
মানুষের গভীর সম্পর্ক অনুভব করা যায়। কবি বোঝাতে চেয়েছেন, প্রকৃত আনন্দ ও তৃপ্তি শহরের
কৃত্রিম জীবনে নয়, বরং এই সরল গ্রামীণ
জীবনেই নিহিত।
২. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতার মূল ভাব বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ এই কবিতায় গিরিন্দ্র মোহিনী দাশী গ্রামীণ জীবনের এক সুন্দর, প্রাণবন্ত
চিত্র তুলে ধরেছেন। গ্রামের সকাল, শিশুরা প্রকৃতির কোলে খেলা করছে, নারীরা কাজ করছে, কৃষকের পরিশ্রম—সব মিলিয়ে একটি
সজীব চিত্র ফুটে উঠেছে। কবি প্রকৃতিকে মায়াবী ও জীবন্ত রূপে
দেখিয়েছেন। এই কবিতার মূল
ভাব—প্রকৃতি ও সরল জীবনের
মধ্যেই মানব জীবনের প্রকৃত আনন্দ নিহিত।
৩. গ্রামীণ প্রকৃতি ও শিশুর সম্পর্ক ‘গ্রাম্যছবি’
কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ কবিতায় শিশুদের গ্রামীণ প্রকৃতির সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ
সম্পর্ক তুলে
ধরা
হয়েছে। তারা
গাছতলায় খেলে,
নদীর
ধারে
ছুটে
বেড়ায়, পাখি
ধরে,
জল
ছিটায়। প্রকৃতি যেন
তাদের
খেলাঘর। এই
সম্পর্ক সরলতা,
স্বাধীনতা ও
আনন্দের পরিচয়
বহন
করে।
শিশু
ও
প্রকৃতি একে
অপরকে
পরিপূরক করে
তোলে।
৪. কবিতায় কৃষকের জীবনের চিত্র আলোচনা কর।
উত্তরঃ কৃষকেরা সকালে
সূর্য
উঠার
সঙ্গে
সঙ্গে
মাঠে
যায়।
তারা
হাল
নিয়ে
পরিশ্রম করে।
কবিতায় তাদের
জীবনের
কঠোরতা
এবং
প্রকৃতির সঙ্গে
সখ্যতার ছবি
উঠে
এসেছে।
তাদের
পরিশ্রম কবির
দৃষ্টিতে গর্বের,
যা
গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি।
৫. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতার ভাষাশৈলী
ও অলংকারের
ব্যবহার আলোচনা কর।
উত্তরঃ কবিতার ভাষা
সহজ,
প্রাঞ্জল ও
বর্ণনামূলক। অলংকার
হিসেবে
চিত্রকল্প, উপমা
এবং
রূপক
ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন—“সূর্যের সোনালি আলো”, “শিশুর
খেলা
যেন
পাখির
কূজন”—এসব চিত্রকল্প কবিতাকে জীবন্ত
করে
তোলে।
অলংকারের মাধ্যমে কবি
কবিতাকে আবেগময় ও
হৃদয়গ্রাহী করে
তুলেছেন।
৬. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতায় নারীদের কর্মব্যস্ততা ও জীবনচিত্র
তুলে ধর।
উত্তরঃ কবিতাটিতে গ্রামীণ নারীদের সকালের
কর্মব্যস্ততা অত্যন্ত নিপুণভাবে তুলে
ধরা
হয়েছে। তারা
কুয়ো
থেকে
জল
তোলে,
রান্নাবান্না করে,
গৃহস্থালি সামলায়। শিশুরা
ঘরের
পাশে
খেলে,
আর
নারীরা
তাদের
চোখে
চোখে
রাখে।
কবি
নারীদের এই
শ্রমকে
অতি
সাধারণ
করে
দেখাননি, বরং
তা
এক
পবিত্র
দায়িত্ব হিসেবে
চিত্রিত করেছেন। গৃহবধূদের মুখে
পরিশ্রমের ক্লান্তি থাকলেও
তাতে
থাকে
তৃপ্তি
ও
ভালোবাসা। এই
অংশ
গ্রামীণ সমাজে
নারীর
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
ও
আত্মত্যাগের পরিচয়
বহন
করে।
৭. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতায় প্রকৃতির
ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তরঃ
‘গ্রাম্যছবি’ কবিতায় প্রকৃতি একটি
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের ভূমিকা
পালন
করে।
সকালবেলার পাখির
কূজন,
শিশিরভেজা মাঠ,
নদীর
ধারে
শিশুদের খেলা—এই সব কিছুই
প্রকৃতিকে জীবন্ত
করে
তোলে।
কবির
দৃষ্টিতে প্রকৃতি শুধু
পটভূমি
নয়,
বরং
মানুষের জীবন
ও
আবেগের
সঙ্গে
একাত্ম। শিশুরা
প্রকৃতির সঙ্গে
মিশে
খেলে,
কৃষক
প্রকৃতির দান
ফসলে
পরিণত
করে,
নারীরা
প্রকৃতির ছায়ায় কাজ
করে।
প্রকৃতি যেন
এ
গ্রামজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
৮. শহর ও গ্রামের জীবনযাত্রার তুলনামূলক আলোচনা করো ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতার আলোকে।
উত্তরঃ
‘গ্রাম্যছবি’ কবিতায় কবি
গ্রামীণ জীবনের
সরলতা,
শান্তি
ও
প্রকৃতির সঙ্গে
সম্পৃক্ততাকে তুলে
ধরেছেন। শহরজীবন যেখানে
যান্ত্রিক, কোলাহলপূর্ণ ও
ব্যস্ত,
সেখানে
গ্রামজীবন শান্ত,
ছন্দময় ও
প্রকৃতি নির্ভর। গ্রামের শিশুরা
মুক্তভাবে খেলে,
নারীরা
পরিবারের কাজে
নিয়োজিত থাকে
এবং
প্রকৃতির ছায়ায় সবাই
স্বস্তি পায়।
শহরে
এসব
অভাব।
কবির
ভাষায়,
প্রকৃত
আনন্দ
ও
তৃপ্তি
শহরের
ইট-পাথরের মাঝে নয়,
গ্রামে
প্রকৃতির কোলে।
৯. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতায় শিশুদের ভূমিকা ও আচরণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ এই কবিতায় শিশুদের সরল,
প্রাণবন্ত আচরণ
কবিতার
প্রাণ।
তারা
পাখি
ধরে,
গাছতলায় খেলে,
নদীতে
ছুটে
যায়।
শিশুদের এই
নির্ভীক, স্বতঃস্ফূর্ত চলাফেরা কবির
চোখে
এক
রঙিন
ছবি
হয়ে
ওঠে।
তাদের
চোখে
কোনো
ভয়
নেই,
কল্পনাশক্তি প্রবল,
তারা
প্রকৃতির সঙ্গে
একাত্ম। কবি
শিশুদের এই
প্রাণচাঞ্চল্য ও
নিষ্কলুষতা তুলে
ধরে
একটি
সুখী
গ্রামজীবনের ভাবনা
প্রকাশ
করেছেন।
১০. ‘গ্রাম্যছবি’ কবিতায় মানব-প্রকৃতি সম্পর্ক ব্যাখ্যা
কর।
উত্তরঃ এই কবিতায়
কবি
দেখিয়েছেন, মানুষ
ও
প্রকৃতির মধ্যে
নিবিড়
সম্পর্ক। কৃষক
জমিতে
হাল
চালায়—প্রকৃতিকে আপন করে ফসল
ফলায়।
নারী
প্রকৃতির কোলে
কাজ
করে,
শিশু
প্রকৃতির মাঝে
খেলে
বেড়ায়। প্রকৃতি এখানে
শুধু
আশ্রয়
নয়,
ভালোবাসার বস্তু।
এই
সম্পর্ক পারস্পরিক নির্ভরশীলতার—প্রকৃতি মানুষকে দেয়
খাদ্য,
সৌন্দর্য ও
শান্তি;
মানুষ
প্রকৃতিকে রক্ষা
করে,
তার
ছায়ায় জীবনযাপন করে।
এই
কবিতা
তাই
প্রকৃতি ও
মানুষের বন্ধনকে নতুন
দৃষ্টিতে দেখতে
শেখায়।
0 comments:
Post a Comment