আবার আসিব ফিরে
জীবনানন্দ দাশ
'আবার আসিব ফিরে' কবিতাটি কবির 'রূপসী বাংলা' কাব্য থেকে নেয়া হয়েছে। কবি এই কবিতায় ব্যক্ত করেছেন যে, তিনি নিজের দেশকে খুবই ভালোবাসেন। প্রিয় জন্মভূমির তুচ্ছ জিনিসগুলো তাঁর দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। কবি মনে করেন, তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর দেশের সঙ্গে মমতার বাঁধন ছিন্ন হবে না। তিনি বাংলার নদী, মাঠ, ফসলের ক্ষেতকে ভালোবেসে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসবেন। আবার কখনো বা ভোরের কাক হয়ে কুয়াশায় মিশে যাবেন। এমনও হতে পারে, তিনি হাঁস হয়ে সারাদিন কলমির গন্ধে ভরা বিলের জলে ভেসে বেড়াবেন। এমনকি দিনের শেষে যে সাদা বকের দল মেঘের কোল ঘেঁষে নীড়ে ফিরে আসে তাদের মাঝেও কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এভাবে তিনি বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাবেন।
জীবনানন্দ দাশকে বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি বলা হয়। তিনি পূর্ববঙ্গের
(বর্তমান বাংলাদেশের) বরিশাল শহরে ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর
পিতার নাম সত্যানন্দ দাশ এবং মাতার নাম কুসুম কুমারী দেবী। তিনি ১৯২১ সালে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন। ইংরাজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে তাঁর
কর্মজীবন শুরু হয় এবং তিনি বিভিন্ন সময়ে কলকাতার সিতি কলেজে, দিল্লী রামজশ কলেজে,
বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে, খড়গপুর কলেজে, বরিষা কলেজে ও হাওড়া কলেজে অধ্যাপনা করেন।
এক সময়ে তিনি সাংবাদিকতার পেশাও অবলম্বন করেছিলেন। জীবনানন্দ দাশের কবিতায়
বাংলাদেশের প্রকৃতির বিচিত্র রং ও রূপের প্রকাশ ঘটেছে। অনেক অজানা গাছ, পশুপাখি
ও লতাপাতা তাঁর কবিতায় নতুন পরিচয়ে ধরা পড়েছে। প্রকৃতিপ্রেমিক এই কবি প্রকৃতি
থেকেই তাঁর কবিতার রূপরস সংগ্রহ করেছেন। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ
রচনা করেছেন।
আধুনিক কবিদের মধ্যে তিনি ছিলেন স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। তাঁর কবিতায় যেমন
ইতিহাস চেতনা, বিপন্ন মানবতার ব্যথায় বিষণ্ণতা ও নিঃসঙ্গতা আছে, তেমনি আছে
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপ-রস-গন্ধের উপলব্ধি এবং জগতের প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি গভীর
প্রেম। জীবনানন্দ দাশ অল্প বয়সেই কাব্যচর্চা শুরু করেন। তবে তাঁর প্রথম কবিয়া
‘আবাহন’ প্রকাশিত হয় ১৯১৯ সালে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘ঝরাপালক’। তাঁর
রচিত ‘বনলতা সেন’ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য। তাঁর রচিত
অন্যান্য কাব্যের মধ্যে ‘রূপসী বাংলা’, ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’, ‘সাতটি তারার তিমির’, ও
‘মহাপৃথিবী’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর তাঁর এক ট্রাম
দুর্ঘটনায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
শব্দার্থ
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নত্তোরঃ
প্রঃ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার
কবি কে?
উত্তরঃ জীবনানন্দ দাশ।
প্রঃ কবির কবিতার বিশেষ লক্ষণ
কী?
উত্তরঃ চিত্র রূপময়তা।
প্রঃ কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত
প্রধান কাব্যগ্রন্থটির নাম কী?
উত্তরঃ বনলতা সেন।
প্রঃ কবি জীবনানন্দ দাশ
কর্মজীবনে কী করতেন?
উত্তরঃ বিভিন্ন কলেজে
অধ্যাপনা।
প্রঃ ‘আবার আসিব ফিরে' কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
ঊত্তরঃ রূপসী বাংলা।
প্রঃ কবির মৃত্যু কীভাবে
ঘটেছিল?
উত্তরঃ ট্রাম দুর্ঘটনায়।
প্রঃ কবির জন্ম কোন নদীর ধারে
হয়েছিল?
উত্তরঃ ধানসিঁড়ি নদীর ধারে।
প্রঃ কবির কোন জন্মে ‘পায়ে
ঘুঙুর’ থাকবে বলে বলেছেন?
উত্তরঃ হাঁসরূপে জন্মে।
প্রঃ লক্ষ্মীপেঁচা কোন গাছের ডালে থাকে?
উত্তরঃ শিমূল গাছের ডালে।
প্রঃ কবি কোন জন্মে 'কুয়াশার বুকে কাঁঠাল - ছায়ায় আসিবেন' বলে আশা করেন?
উত্তরঃ ভোরের কাক রূপে জন্মে।
প্রঃ কবি জীবনানন্দ দাশ কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ ১৮৯৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি।
প্রঃ ‘আবার আসিব ফিরে' কবিতায় কবি পরজন্মে কোন নদীর ঢেউয়ের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তরঃ জলাঙ্গী নদীর ঢেউয়ের কথা।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রঃ কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত চারটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তরঃ 'বনলতা সেন', 'সাতটি তারার তিমির', 'রূপসী বাংলা' ও 'মহাপৃথিবী'।
প্রঃ কবির কাব্যগুলোতে বিশেষত কী কী ভাবের আকর্ষণ বেশি দেখা যায়।
উত্তরঃ কবির কাব্যগুলোতে ইতিহাস-চেতনা, বিপন্ন মানবতার ব্যথা, বিষণ্ণতা ও নিঃসঙ্গতা, প্রকৃতি চেতনা প্রভৃতি ভাবের আকর্ষণ বেশি দেখা যায়।
প্রঃ 'আবার আসিব ফিরে' কবিতায় কবি কোন্ কোন্ রূপে পুনরায় জন্ম নিয়ে ফিরে আস্তে চান?
উত্তরঃ কবি ভোরের কাক, শঙ্খচিল, শালিক, হাঁস, বক, কিশোর, লক্ষ্মীপেঁচা, সুদর্শন এর মধ্যে যে কোন একটি রূপে পুনরায় জন্ম নিয়ে ফিরে আস্তে চান।
প্রঃ কবি যখন হাঁস হবেন তখন তিনি কী করবেন?
উত্তরঃ কবি যখন হাঁস রূপে জন্ম নেবেন তখন তিনি সারাদিন বাংলার কোন কলমি ঘেরা পুকুরের জলে সাঁতার কেতে ভেসে বেড়াবেন।
প্রঃ কবির জন্ম ও মৃত্যুর বিষয়ে লেখো।
উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশ পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশের) বরিশাল শহরে ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর ট্রাম দুর্ঘটনায় তাঁর কলকাতায় মৃত্যু হয়।
প্রঃ টীকা লেখোঃ সুদর্শন, নবান্ন।
উত্তরঃ সুদর্শন - একপ্রকার পাখি যা দেখতে খুব সুন্দর।
নবান্ন - পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশের) গ্রামের মানুষদের পালন করা এক উৎসব। হেমন্তকালে বাংলার কৃষকরা শালিধান কাটার পর নতুন ধানের নতুন চাল গ্রহণ করা উপলক্ষে এক প্রকার বিশেষ উৎসব আয়োজিত হয়। এ উৎসবের নাম নবান্ন উৎসব। এ সময় বাংলার ঘরে ঘরে খুশির জোয়ার আসে।
প্রঃ কবি পুনঃজন্মে বিশ্বাস করেন কী? এ বিষয়ে যা জানো লেখো।
উত্তরঃ কবি পুনঃজন্মে বিশ্বাস করেন। আলোচ্য কবিতায় আমরা দেখতে পাই কবি তাঁর জন্মভূমি রূপসী বাংলাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন। তিনি বাংলার নদী, মাঠঘাট, পশুপাখি, গাছ-পালার প্রতি দুর্বার আকর্ষণ অনুভব করেন। তিনি বাংলার নিসর্গ সৌন্দর্যে বিভোর। তাই পরজন্মে মানুষ হয়ে জন্মাতে না পারলেও বিভিন্ন পশুপাখির মধ্যে নিজেকে ফিরে পাবার আশা রাখেন।
প্রঃ কবি হাঁস হয়ে পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে চান কেন?
উত্তরঃ কবি জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। তিনি বাংলার মাঠ, ঘাট, পশুপাখি, গাছ-গাছলা সবকিছুর প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করেন। বাংলার সজল শ্যামল প্রকৃতি ও তার বুকে লালিত পালিত মানুষ ও প্রাণীদের দেখে তাঁর আশা মেটে না। তিনি বারবার এই রূপসী বাংলায় ফিরে আসতে চান। তাই তিনি কলমির গন্ধ ভরা পুকুরের জলে ভাসমান হাঁসরূপে পরজন্মে এই বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান।
প্রঃ নবান্ন উৎসব কী? এ বিষয়ে যা জানো লেখো।
উত্তরঃ গ্রাম বাংলায় নতুন ধান কাটার পর বাঙালির ঘরে ঘরে যে উৎসব পালিত হয়, তাকে নবান্ন উৎসব বলা হয়। হেমন্তকালে বাংলাদেশে শালিধান কাটার পর কৃষকরা নতুন ধান থাকে নতুন চালের অন্ন গ্রহণ করার উপলক্ষে এক বিশেষ উৎসবের আয়োজন করে। এই উৎসবই নবান্ন উৎসব। তাই প্রতি বছর শালি ধান কাটার পর অগ্রহায়ন মাসে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে এই উৎসব পালন করা হয়।
প্রঃ টীকা লেখো - জলাঙ্গী, ধানসিড়ি।
উত্তরঃ জলাঙ্গী - জলাঙ্গী পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য নদী। এটি একটি ছোট নদী। কিন্তু বর্ষায় এই নদী বেশ খরস্রোতা হয়ে ভীষণরূপ ধারণ করে। নদীটি মেঘালয়ের শিলং থেকে অসমের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলার কৃষিকাজে এই নদীর জল অত্যন্ত সহায়ক হয়।
ধানসিড়ি - ধানসিড়ি বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি ছোট নদী। এই নদীতে বছরের বেশিরভাগ সময় জল থাকে না। এই নদীর স্রোত শান্ত ও ধীর প্রকৃতির। এই নদীর জলে হাঁস, বক খেলা করে মাছ ধরে। এই নদীটি বাংলাদেশের শ্রীহট্ট, বরিশালের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কবি জীবনানন্দ দাশের 'আবার আসিব ফিরে' কবিতায় এই নদীটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রঃ 'ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে' - উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ কী?
উত্তরঃ 'কার্তিকের নবান্নের দেশে' বলতে কবি জীবনানন্দ দাশ এখানে রূপসী বাংলাদেশের কথা বলেছেন। এই বাংলার মাটিতে মানুষ, পশু, পাখি, যে কোন রূপে কবি বারবার ফিরে আসতে চেয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস মৃত্যুর পর হয়তো বা তিনি কোন এক কাক রূপে এই বাংলায় ফিরে আসতে পারেন।উদ্ধৃতাংশটিতে রূপসী বাংলাদেশে কবির ফিরে আসার আকুতি বারবার ধ্বনিত হয়েছে।
দীর্ঘ উত্তরীয় প্রশ্নঃ
প্রঃ 'আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে' - এই উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ 'আবার আসিব ফিরে' কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ মানুষের রূপে না হলেও অন্য যে কোন রূপে ফিরে আসতে চান। তিনি ফিরে আসতে চান ধানসিঁড়ি নদীর তীরে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে বা কুয়াশার ভোরের কাক হয়ে। হয়তো বা তিনি কলমির গন্ধে ভরা পুকুরে সারাদিন সাঁতার কেটে ভেসে বেড়ানো হাঁস হয়ে আসবেন। সন্ধ্যার আকাশে তিনি সুদর্শন হয়ে উড়বেন। শিমুলের ডালে কোন এক লক্ষ্মীপেঁচা হয়ে ডাকতে পারেন। আবার শাদা পালতোলা ডিঙা বাইতে থাকা কিশোরের মধ্যেও কবিকে দেখা যেতে পারে। এদের ভিড়ে আমরা অবশ্যই কবিকে খোঁজে পাবো বলে কবির দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রঃ 'আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে' - কবি পুনরায় জন্মগ্রহণ করে কাদের ভিড়ে ফিরে আসতে চান? বর্ণনা করো।
উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার নদী-মাঠ-খেতকে মনেপ্রাণে ভালোবেসেছেন। তাই তিনি যে - কোন রূপে এই বাংলার বুকে ফিরে আসতে চেয়েছেন। মানুষ রূপে না হলেও অন্য কোন রূপে কবি এই বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান পরজন্মে। তিনি বলেছেন ধানসিঁড়ি নদীর তীরে নিজ গ্রামে একদিন ফিরে আসবেন শঙ্খচিল বা শালিক রূপে। হয়তো বা কলমির গন্ধে ভরা পুকুরের নির্মল জলে হাঁস হয়ে সাঁতার কাটবেন। হয়তো বা সন্ধ্যার আকাশে সুদর্শন হয়ে উড়বেন। শিমুলের ডালে বসে ডাকতে থাকা কোন এক লক্ষ্মীপেঁচা হয়েও ফিরে আসতে পারেন। আবার উঠোনের ঘাসে বসে ধান ছড়াতে থাকা কোন এক শিশু রূপে ফিরে আসতে পারেন। রূপসার ঘোলা জলে সাদা ছেড়া পাল তোলা ডিঙা বাইতে থাকা কোন এক কিশোরের বেশেও তিনি এই বাংলায় ফিরে আসতে পারেন। হয়তো বা সন্ধ্যায় রাঙা মেঘ সাঁতরে নীড়ে ফিরে আসা একঝাক সাদা বকের মধ্যে তাকে দেখা যেতে পারে। তাই কবি বলেছেন পরজন্মে তাকে এদের ভিড়েই খোঁজে পাওয়া যাবে।
প্রঃ 'আবার আসিব ফিরে' কবিতাটির সারাংশ সংক্ষেপে ব্যক্ত করো।
উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার মাটি, নদী, প্রকৃতি ও মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। তাই জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী কবি আবার এই বাংলায় ফিরে আসতে চান। তিনি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে কোথাও তিনি জন্ম নিতে চান। হয়তো তিনি মনুষ্যরূপে জন্ম নাও নিতে পারেন, তবে শঙ্খচিল, শালিক বা ভোরের কাক হয়েও জন্ম নিতে পারেন। কার্তিক মাসে ফসল ঘরে তোলার পর বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। মেতে ওঠা এই নবান্ন উৎসবে কুয়াশায় কবি ভেসে আসবেন একদিন কাঁঠাল ছায়ায়। হয়তো বা হাঁস হবেন। সারাদিন তাঁর কেটে যাবে কলমির গন্ধ ভরা বাংলার খাল - বিলের জলের উপর ভেসে ভেসে। কবি বাংলার নদী, মাঠ, ক্ষেতকে এতো গভীরভাবে ভালোবাসেন যে তিনি বলছেন তিনি হয়তো বাংলার মাঠে, ঘাটে, ক্ষেতে, জলাঙ্গীর ডাঙায় কোন প্রাণীর মধ্যে মিশে থাকতে পারেন। হয়তো তিনি হতে পারেন শিমুল গাছের ডালে বসে ডাকতে থাকা এক লক্ষ্মীপেঁচা। আবার তাকে দেখা যেতে পারে উঠোনের ঘাসে ধান ছড়াতে থাকা এক শিশুর মধ্যে কিংবা রূপসা ন্দীর ঘোলা জলে সাদা ছেড়া পাল তুলে ডিঙা বাইতে থাকা কোন এক কিশোরের মধ্যে। তিনি ফিরে আসতে পারেন রাঙা মেঘের ভেতর দিয়ে সন্ধ্যার আকাশে নীড়ে ফিরে আসা কোন সদা বকের প্রতিচ্ছবির মধ্যে। পরজন্মে এদের সবার ভিড়ে কবি নিজেকে ফিরে পেতে চান। কবির এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে কবিতায় ফুটে উঠেছে।
প্রঃ 'আবার আসিব ফিরে' কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ কবি বাংলার নিসর্গ সৌন্দর্যে বিভোর। তিনি জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। পরজন্মে তিনি এই বাংলার বুকেই জন্মগ্রহণ করতে চান। হয়তো বা তিনি মানুষ না হয়েও জন্মাতে পারেন। বাংলার প্রকৃতির পটে বিচরণশীল পশু, পাখি ও মানুষের ভিড়ে কোন না কোন রূপে থাকবেনই। তিনি ফিরে আসবেন ধানসিঁড়ি নদীর তীরে, হয়তো শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে। কবির ধারণা তিনি তিনি হয়তো ভোরের কাক, হয়তো বা সাদা বক হয়ে জন্ম নিয়ে ফিরে আসবেন। অথবা শিমুল গাছের ডালে বসে ডাকতে থাকা কোন লক্ষ্মীপেঁচা হয়ে আসবেন। তিনি হয়তো হাঁস হয়ে কলমির গন্ধভরা বাংলার খাল বিলের জলের উপর ভেসে সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারেন। আবার তিনি থাকতে পারেন উঠোনের ঘাসে ধান ছড়াতে থাকা কোন এক শিশুর মধ্যে কিংবা থাকতে পারেন রূপসা নদীর ঘোলা জলে সাদা ছেড়া পাল তুলে ডিঙা বাইতে থাকা কোন এক কিশোরের মধ্যে। তিনি ফিরে আসতে পারেন রাঙা মেঘ সাঁতরে সন্ধ্যার আকাশে নীড়ে ফিরে আসা কোন ধবল বকের প্রতিচ্ছবির মধ্যে। কবি পরজন্মে এদের ভিড়ে আবার নিজেকে ফিরে পেতে চান। কবির এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে। তাই আলোচ্য কবিতার নামকরণ 'আবার আসিব ফিরে' সার্থক হয়েছে।
প্রঃ ব্যাখ্যা লেখো - 'ভোরের কাক হয়ে এই নবান্নের দেশে।'
উত্তরঃ আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা 'আবার আসিব ফিরে' শীর্ষক কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে।
কবি গ্রাম বাংলার অনন্ত সৌন্দর্যে বিভোর। এই বাংলার বুকে তিনি মানুষ রূপে না হলেও অন্য যে কোন কালে যে কোন রূপে ফিরে আসতে চেয়েছেন। তিনি বলছেন যে তিনি হয়তো ভোরের কাক হয়ে ফিরে আসবেন। এখানে নবান্নের দেশ বলতে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে কার্তিক মাসের শেষে শালিধান কেটে ঘরে তোলার পর গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব পালিত হয়। তাই কবি বাংলাকে 'নবান্নের দেশ' বলেছেন এবং পরজন্মে তিনি এই নবান্নের দেশে ভোরের কাক হয়ে ফিরে আসতে চেয়েছেন।
প্রঃ ব্যাখ্যা লেখো - 'বাংলার নদী, মাঠ, খেত ভালোবেসে।'
উত্তরঃ আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা 'আবার আসিব ফিরে' শীর্ষক কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে। উদ্ধৃত অংশে কবির মনের সমস্ত বাসনা, সমস্ত অনুভূতি গ্রাম বাংলাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।
কবি জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। তিনি পরজন্মে তাঁর জন্মভূমি রূপসী বাংলার বুকে ফিরে আসতে চান। কারণ বাংলার নদী, মাঠ, খেত সবকিছুকে তিনি গভীরভাবে ভালোবাসেন। বাংলার চিরন্তন রূপ দেখে তাঁর আশা মেটে না। তিনি বারবার বাংলার নিসর্গ সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করতে চান। বাংলার নদী - মাঠ - খেতের সঙ্গে কবির গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক।
প্রঃ ব্যাখ্যা লেখো - 'আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে'।
উত্তরঃ আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা 'আবার আসিব ফিরে' শীর্ষক কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে। কবি যে কোন রূপে বাংলার বুকে ফিরে আসতে চেয়েছেন।
'আবার আসিব ফিরে' কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ বলছেন যে তিনি মানুষের রূপে না হলেও অন্য যে কোন রূপে এই বাংলায় পুনরায় ফিরে আসতে চান। তিনি ফিরে আসতে চান ধানসিঁড়ি নদীর তীরে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে। কুয়াশার ভোরের কাক হয়ে ফিরে আসতে চান। হয়তো বা তিনি কলমির গন্ধে ভরা পুকুরে সারাদিন সাঁতার কেটে ভেসে বেড়ানো হাঁস হয়ে ফিরে আসবেন। সন্ধ্যার আকাশে তিনি সুদর্শন হয়ে উড়বেন। শিমুলের ডালে কোন এক লক্ষ্মীপেঁচা হয়ে ডাকতে পারেন। আবার সাদা পালতোলা ডিঙা বাইতে থাকা কিশোরের মধ্যেও কবিকে দেখা যেতে পারে। এদের ভিড়ে আমরা অবশ্যই কবিকে খোঁজে পাবো বলে কবির দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রঃ 'আবার আসিব ফিরে' কবিতায় কবি কোথায় এবং কেন ফিরে আসতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ কবি জীবননান্দ দাশ বাংলার মাটি, ঘাট, নদী, প্রকৃতি ও মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। তাই জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী কবি আবার এই বাংলায় ফিরে আসতে চান। তিনি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে কোথাও জন্ম নিতে চান। হয়তো তিনি মনুষ্য রূপে জন্ম নাও নিতে পারেন, তবে শঙ্খচিল, শালিক বা ভোরের কাক হয়েও জন্ম নিতে পারেন। কার্তিক মাসে ফসল ঘরে তোলার পর বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। মেতে উঠা এই নবান্ন উৎসবে কুয়াশায় কবি ভেসে আসবেন একদিন কাঠাল ছায়ায়। হয়তো বা হাঁস হবেন। সারাদিন তাঁর কেটে যাবে কলমির গন্ধ ভরা বাংলার খাল-বিলের জলের উপর ভেসে ভেসে। তিনি বাংলার নদে - মাঠ - খেতকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। তাই কবি হয়তো বাংলার মাঠে, ঘাটে, খেতে, জলাঙ্গীর ডাঙায় কোন প্রাণীর মধ্যে মিশে থাকতে পারেন। হয়তো তিনি হতে পারেন শিমুল গাছের ডালে বসে ডাকতে থাকে এক লক্ষ্মীপেঁচা। আবার তাকে দেখা যেতে পারে উঠোনের ঘাসে ধান ছড়াতে থাকা এক শিশুর মধ্যে কিংবা রূপসা নদীর ঘোলা জলে সাদা ছেড়া পাল তোলে ডিঙা বাইতে থাকা কোন এক কিশোরের মধ্যে। তিনি ফিরে আসতে পারেন রাঙা মেঘের ভেতর দিয়ে সন্ধ্যার আকাশে নীড়ে ফিরে আসা কোন সাদা বকের প্রতিচ্ছবির মধ্যে। পরজন্মে এদের সবার ভিড়ে কবি নিজেকে ফিরে পেতে চান। কবির এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে কবিতায় ফুটে উঠেছে।
পাঠ ভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ
প্রঃ শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
(ক) রূপসার ___ জলে হয়তো ___ এক সাদা ছেঁড়া পালে ___ বায়;
উত্তরঃ রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে ডিঙা বায়;
(খ) শুনিবে এক ___ ডাকিতেছে ___ ডালে,
উত্তরঃ শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে,
(গ) আবার আসিব ফিরে আমি ____ নদী মাঠ খেত ____ ,
____ ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ ____ সবুজ করুণ ____।
উত্তরঃ আবার আসিব ফিরে আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে ,
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়।
পাঠনির্ভর ব্যাকরণ
প্রঃ পদ পরিবর্তন করোঃ
করুণ - কারুণ্য।
সন্ধ্যা - সান্ধ্য।
মানুষ - মনুষ্যত্ব।
মাঠ - মেঠো।
জল - জলীয়।
শিশু - শৈশব।
রাঙা - রঙিন।
সাদা - সাদাটে।
কিশোর - কৈশোর।
নাশ - নাশকতা।
অন্তর - আন্তরিক।
আদি - আদ্য।
সময় - সাময়িক।
সম - সমতা।
প্রঃ সরল, যৌগিক ও জটিল বাক্য কাকে বলে উদাহরণ সহ লেখো।
উত্তরঃ সরল বাক্য - যে সকল বাক্য কেবলমাত্র একটি উদ্দেশ্য ও একটি বিধেয় নিয়ে গঠিত হয় সে সকল বাক্যকে সরল বাক্য বাক্য বলে। যেমন - ১। আমি ভাত খাবো। ২। বাবা দিল্লী গেছেন।
যৌগিক বাক্য - একাধিক সরল বাক্য যখন অব্যয় পদ দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি পূর্ণ বাক্য গঠন করে তখন তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন - ১। সে এখানে এসেছিল কিন্তু আমি তাকে দেখিনি। ২। সে কোন দোষ করেনি তবু তার শাস্তি হল।
জটিল বাক্য - যে বাক্যে পরস্পরের উপর একাধিক নির্ভরশীল উপাদান বাক্য থাকে তাকে জটিল বাক্য বলে। যেমন - ১। যদিও লোকটি যথেষ্ট বিদ্বান তবুও সে ভীরু। ২। আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে তুমি এমন একটি মিথ্যা কথা বলবে।
প্রঃ সরল, যৌগিক ও জটিল বাক্যের আরো তিনটি করে নিজে বাক্য তৈরি করো।
উত্তরঃ সরল বাক্য - ১। তিনি এখন অফিসে যাবেন। ২। কাল আমি স্কুলে যাবো। ৩। তাকে আমি চিনি।
যৌগিক বাক্য - ১। তিনি এলে তবে আমি যাবো। ২। পড়তে বসো এবং স্কুলের পড়া শেখো। ৩। অভয় যখন পেয়েছি তবে সত্য কথাটাই বলবো।
জটিল বাক্য - ১। আমি জানি সে কোথায় থাকে। ২। যে ছেলেটি কাল এসেছিল তাকে আমি চিনি। ৩। যে কলমটি হেরেছে তা আমার বাবা দিয়েছিলেন।
প্রঃ এক কথায় প্রকাশ করো (বাক্য সংকোচন)।
১। যা জানার যোগ্য বা জানতে হবে - জ্ঞাতব্য।
২। যা কখনো ভাবা যায় না - অভাবনীয়।
৩। পতিপুত্রহীনা নারী - অবীরা।
৪। যিনি কম কথা বলেন - মিতভাষী/ স্বল্পবাক।
৫। পক্ষীর কলরব - কূজন।
৬। ময়ূরের ডাক - কেকা।
৭। একই মায়ের পুত্র - সহোদর।
৮। মানুষের হাড় - অস্থি।
৯। যিনি দ্বার পরিগ্রহ করেন নাই - অকৃতদ্বার।
১০। ভোজন করিবার ইচ্ছা - বুভুক্ষা।
১১। যে নারীর সম্প্রতি বিবাহ হয়েছে - নবোঢ়া।
১২। যাহার দুই হাত সমান চলে - সব্যসাচী।
১৩। বিচলিত মন যার - বিমনা।
১৪। যে বস্তু পেতে ইচ্ছা করা যায় - ইঙ্গিত।
১৫। রাত্রিকালীন যুদ্ধ - সৌপ্তিক।
১৬। রক্তবর্ণ পদ্ম - কোকনদ।
১৭। কুমারীর পুত্র - কৌমারীকেয়।
১৮। বিষ্ণুর গদা - কৌমুদকী।
১৯। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শঙ্খ - পাঞ্চজন্য।
২০। হস্তীর শাবক - কড়ভ।
২১। হাতী বাঁধার স্থান - বারী।
বহু নির্বাচনী প্রশ্নঃ
১। ধানসিঁড়ি কীসের নাম?
(ক) নদীর (খ) শহরের (গ) গ্রামের (ঘ) ধানের
উত্তরঃ (ক) নদীর।
২। 'আবার আসিব ফিরে' কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
(ক) ধূসর পাণ্ডুলিপি (খ) রূপসী বাংলা (গ) ঝড়াপালক (ঘ) বনলতা সেন
উত্তরঃ (খ) রূপসী বাংলা।
৩। 'সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে' - এখানে সারাদিন কেটে যাবে কার?
(ক) হাঁসের (খ) কিশোরীর (গ) কাকের (ঘ) কবির
উত্তরঃ হাঁসের।
প্রঃ শিমুলের ডালে কে ডাকছে?
উত্তরঃ শিমুলের ডালে লক্ষ্মীপেঁচা ডাকছে।
প্রঃ 'আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে' - বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ 'আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে' - এই উক্তি দ্বারা কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে মৃত্যুর পরও বাংলার প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গে কবির উপস্থিতি থাকবে।
প্রঃ 'রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে দেখিবে ধবল বক' - চরণটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ 'রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে দেখিবে ধবল বক' - চরণটিতে কবির দেশের বুকে ফিরে আসার আকঙ্খা ব্যক্ত হয়েছে।
ধবল বক দিন শেষে গোধূলিবেলায় রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে নীড়ে ফিরে আসে। কবিও সেভাবে দেশের বুকে ফিরে আসতে চান। মৃত্যুর পরেও তিনি প্রকৃতির মধ্যেই ফিরে আসার ইচ্ছা পোষণ করেন। বক হয়ে তিনিও যেন রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে নীড়ে ফিরে আসবেন।
0 comments:
Post a Comment