কারক বিভক্তি
বিষয় - কারক বিভক্তি ও অনুসর্গ
কারককে
আমরা ছয়টি শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি। – কর্তৃকারক, কর্মকারক, করণ
কারক, নিমিত্ত
কারক, অপাদান
কারক এবং অধিকরণ কারক। এই ছয়টি বিভাগ ছাড়া আছে দুটি অকারক পদ – সম্বন্ধ
পদ ও সম্বোধন পদ। এখন এই শ্রেণীগুলি সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা
নেওয়া যাক।
কর্তৃকারক - ‘কর্তৃ’ শব্দটির
আড়ালে আছে ‘কর্তা’। আর বাক্যের কর্তা তিনিই যিনি কোন
কাজ সম্পন্ন করেন। ক্রিয়ার সাথে বাক্যের যে পদের কর্তৃ সম্বন্ধ
আছে সেই পদটিই হবে কর্তৃকারক বলে। কর্তৃকারক নির্ণয়ের
জন্য বাক্যস্থ ক্রিয়াকে ‘কে’ দিয়ে প্রশ্ন করতে হয়।
যেমন
– রাজা দান করেন।
এই বাক্যে ক্রিয়াটি সম্পন্ন করছে ‘রাজা’। বাক্যের ক্রিয়া ‘করেন’কে
‘কে’ দিয়ে
প্রশ্ন করলে উত্তর আসে ‘রাজা’। তাই পদটির কারক কর্তৃকারক।
কর্মকারক - বাক্যের কর্তা যে কাজ
করেন তাকে কর্ম বলে। ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের যে পদটি কর্ম সম্বন্ধ যুক্ত তাকেই
কর্মকারক বলে। এই কারক নির্ণয়ে বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কী’ বা
‘কাকে’ দিয়ে
প্রশ্ন করতে হয়।
যেমন
– রাজা বস্ত্র দান
করেন। এই বাক্যে ক্রিয়া ‘করেন’ কে ‘কী’ দিয়ে
প্রশ্ন করলে উত্তর আসে ‘বস্ত্র’।
করণ কারক - বাক্যের কর্তা যার
দ্বারা কোন কাজ সম্পন্ন করে থাকেন তাকেই করণ বলে। বাক্যের ক্রিয়ার সঙ্গে
বাক্যস্থ যে পদের করণ সম্পর্ক থাকে তাকেই করণ কারক বলে। করণ কারক নির্ণয়ে
বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কি দ্বারা’, ‘কি দিয়ে’ ‘কিসের দ্বারা’ দিয়ে
প্রশ্ন করতে হয়।
যেমন
– রাজা
নিজ হস্তে বস্ত্র দান করেন। এই বাক্যে ক্রিয়া ‘করেন’ কে
‘কী
দিয়ে’ বা
‘কী
দ্বারা’ দিয়ে
প্রশ্ন করলে উত্তর আসে ‘হস্ত’। অতএব ‘হস্ত’ হল করণ কারক।
নিমিত্ত কারক - বাক্যের কর্তা যখন কারো
জন্য কিছু
করে
থাকেন তখন তা নিমিত্ত হয়। বাক্যের ক্রিয়ার সঙ্গে যে পদের এই সম্বন্ধ তাকেই
নিমিত্ত কারক বলে। এই কারক নির্ণয়ে বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কাদের জন্য’ বা ‘কার
নিমিত্তে’
দিয়ে
প্রশ্ন করতে হয়।
যেমন
– রাজা
নিজ হস্তে গরীব প্রজাদের বস্ত্র দান করেন। – এই বাক্যে ক্রিয়া
‘করেন’কে
যদি প্রশ্ন করা হয় ‘কাদের নিমিত্তে’ বা ‘কাদের
উদ্দেশ্যে’
‘দান
করেন’ ? তাহলে
উত্তর আসে ‘গরীব
প্রজা’। এখানে ‘গরীব
প্রজা’ হল
নিমিত্ত কারক।
অপাদান কারক - যা থেকে কোনকিছু পাওয়া
যায় তাকে অপাদান
বলে। বাক্যের যে পদের সঙ্গে ক্রিয়ার এই অপাদান সম্বন্ধ তাকেই অপাদান কারক
বলে। এই কারক নির্ণয়ে বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কোথা থেকে’ বা ‘কি
থেকে’ দিয়ে
প্রশ্ন করতে হয়।
যেমন
– রাজা
ভাণ্ডার থেকে নিজ হস্তে গরীব প্রজাদের বস্ত্র দান করেন। বস্ত্র দান করছেন রাজা।
কিন্তু ‘কোথা
থেকে’ নিয়ে
? উত্তর
‘ভাণ্ডার
থেকে’। এই ভাণ্ডার হল অপাদান কারক।
অধিকরণ কারক - বাক্যস্থ যে পদটি
ক্রিয়ার আধার, অর্থাৎ যে স্থানে বা সময়ে বাক্যের কোন কাজ করে থাকেন
কর্তা তাকে অধিকরণ বলা হয়। ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের যে পদের অধিকরণ
সম্বন্ধ তাকেই অধিকরণ কারক বলে। এই কারকে যখন কোন স্থান বোঝায় তখন হয়
স্থানাধিকরণ আর যখন কোন সময় বোঝায় তখন হয় কালাধিকরণ। এই কারক
নির্ণয়ে বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কোথায়’, ‘কখন’ বা
‘কীসে’ দিয়ে
প্রশ্ন করতে হয়।
যেমন
– রাজা
রাজসভায় ভাণ্ডার থেকে নিজ হস্তে গরীব প্রজাদের বস্ত্র দান করেন। একই ভাবে
ক্রিয়াকে যদি প্রশ্ন করা হয় রাজা কোথায় বস্ত্র দান করেন ? উত্তর আসে ‘রাজসভায়’। তাই এটি অধিকরণ
কারকের উদাহরণ।
কারক বিভক্তি
সম্বন্ধ পদ বাক্যে দুটি নামপদের
মধ্যে যে সম্পর্কের যোগ তাকেই সম্বন্ধ পদ বলে। এই অকারক পদটি সাধারণত ‘র’ বা
‘এর’ বিভক্তি
দ্বারা যুক্ত থাকে।
যেমন
– মামার
ছেলে এসেছে। এই অংশে ‘মামার’ হল সম্বন্ধ পদ। বিভক্তি -র।
সম্বোধন পদ বাক্যে সে পদ দ্বারা
কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় তাকেই সম্বোধন পদ বলে।
যেমন
– রাজা, তোর
কাপড় কোথায় ?
বিভক্তি বিভক্তি হল বর্ণ বা
বর্ণ সমষ্টি যা শব্দকে পদে পরিণত করে। শব্দ যে বাক্যে বসার যোগ্যতা
পায় তা এই বিভক্তির কারণে।
অনুসর্গ বিশেষ্য বা সর্বনাম
পদের পরে বসে যে সব অব্যয় বিভক্তির মত কাজ করে তাদের অনুসর্গ বলে।
যেমন
– আকাশ
থেকে বৃষ্টি ঝরে। এখানে ‘থেকে’ হল অনুসর্গ।
বিভক্তি মনে রাখার উপায়: বাংলায় বিভক্তি সাত প্রকার।
প্রথমা বিভক্তি - অ এবং ০ ।দ্বিতীয়া বিভক্তি - কে এবং রে ।
তৃতীয়া বিভক্তি - দ্বারা, দিয়া এবং কর্তৃক ।
চতুথী বিভক্তি - দ্বিতীয়া বিভক্তির মত তবে নিমিত্ত বা জন্য বুঝাবে।
পঞ্চমী বিভক্তি - হতে, থেকে এবং চেয়ে ।
ষষ্ঠী বিভক্তি - র এবং এর ।
সপ্তমী বিভক্তি - এ, য় ,তে থাকে।
১।কর্তৃকারক: যে কাজ করে সেই কর্তা বা কর্তকারক।
২। কর্মকারক: কর্তা যে কাজ করে সেটাই কর্ম বা কর্মকারক।
৩। করণ কারক: ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র বা উপকরণ বুঝায়।
৪। সম্প্রদান কারক: স্বত্ব ত্যাগ করে দান বা অর্চনা বুঝালে সম্প্রদান কারক। স্বত্ব ত্যাগ না করলে কর্মকারক।
৫। অপাদান কারক: হতে, থেকে বুঝালে অপাদান কারক হবে।
৬। অধিকরণ কারক: ক্রিয়ার সময় বা স্থানকে অধিকরণ কারক বলে।
কারক বিভক্তি
উদাহরণ-
বাবা আমাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। (কাকে দিয়েছেন? আমাকে। কী দিয়েছেন? ল্যাপটপ) : আমাকে- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (গৌণ কর্ম), ল্যাপটপ- কর্মকারকে শূণ্য বিভক্তি (মুখ্য কর্ম)
ডাক্তার ডাক। (কাকে ডাক?) : কর্মকারকে শূণ্য বিভক্তি
আমাকে একটা বই দাও। (কাকে দাও? আমাকে। কী দাও? বই) : আমাকে- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (গৌণ কর্ম), বই- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (মুখ্য কর্ম)
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থণা। (কাকে করিবে? আমারে) : কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি
তোমার দেখা নাই। (কার দেখা? তোমার) : কর্মকারকে ষষ্ঠী বিভক্তি
জিজ্ঞাসিবে জনে জনে। (কাকে জিজ্ঞাসিবে? জনে জনে) : কর্মকারকে সপ্তমী বিভক্তি
পিয়াল কলম দিয়ে লিখছে। (কী দিয়ে লেখে? কলম দিয়ে) : করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি
কীর্তিমান হয় সাধনায়। (কী উপায়ে হয়? সাধনায়) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
ডাকাতেরা গৃহকর্তার মাথায় লাঠি মেরেছে। (কী দিয়ে মেরেছে? গুলি) : করণ কারকে শূণ্য বিভক্তি
লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা হয়। (কী দিয়ে চাষ করা হয়? লাঙ্গল দিয়ে): করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি
মন দিয়ে পড়াশুনা কর। (কী উপায়ে/ দিয়ে কর? মন দিয়ে) : করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি
ফুলে ফুলে ঘর ভরেছে। (কী দিয়ে ভরেছে? ফুলে ফুলে) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
শিকারি বিড়াল গোঁফে চেনা যায়। (কী দিয়ে/ উপায়ে চেনা যায়? গোঁফে): করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
সাধনায় সব হয়। (কী উপায়ে সব হয়? সাধনায়): করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
এ সুতায় কাপড় হয় না। (কী দিয়ে হয় না? সুতায়): করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। (কাকে দান করা হল ভিখারিকে।) : সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি
অসহায়কে খাদ্য দাও। (কাকে দান করা হল অসহায়কে।) : সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি
অন্ধজনে দেহ আলো, মৃতজনে দেহ প্রাণ। (কাকে দান করা হল? অন্ধজনে।): সম্প্রদান কারকে সপ্তমী বিভক্তি
সমিতিতে চাঁদা দাও। (কাকে দান করা হল? সমিতিতে।): সম্প্রদান কারকে সপ্তমী বিভক্তি
গাছ থেকে পাতা পড়ে। (কি হতে বের হল/ পড়ল? গাছ থেকে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
জমি থেকে ফসল পাই। (কি হতে বের হল? জমি থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
দেশ থেকে হায়েনারা চলে গেছে। (কি হতে বের হল? দেশ থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
বিপদ থেকে বাঁচাও। (কি হতে বাঁচাও? বিপদ হতে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
বাঘকে ভয় পায় না কে? (কি হতে ভয় বের হল? বাঘ হতে): অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি
মনে পড়ে সেই জৈষ্ঠ্যের দুপুরে পাঠশালা পলায়ন। (কি হতে বের হল/ পলায়ন? পাঠশালা হতে) : অপাদান কারকে শূণ্য বিভক্তি
বাবাকে বড্ড ভয় পাই। (কি হতে ভয় বের হয়? বাবা হতে) : অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি
তিনি চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন। (কি হতে বের হয়েছেন/ এসেছেন? চট্টগ্রাম হতে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছিলো। (কি হতে বের হল/ ফেলা হল? বিমান হতে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
পুকুরে মাছ আছে। (কোথায় আছে? পুকুরে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
বনে বাঘ আছে। (কোথায় আছে? বনে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে। (কোথায় বাঁধা আছে? ঘাটে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
রাজার দুয়ারে হাতি বাঁধা। (কোথায় বাঁধা? দুয়ারে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
সকালে সূর্য ওঠে। (কখন ওঠে? সকালে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
এ বাড়িতে কেউ নেই। (কোথায় কেউ নেই? বাড়িতে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
নদীতে পানি আছে। (কোথায় আছে? নদীতে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
রবিন অঙ্কে কাঁচা। (কী বিষয়ে কাঁচা? অঙ্কে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
সজিব ব্যাকরণে ভাল। (কী বিষয়ে কাঁচা? ব্যাকরণে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
ঘরের মধ্যে কে রে? (কোথায়? ঘরে) : অধিকরণ কারকে অনুসর্গ মধ্যে
কারক বিভক্তি
0 comments:
Post a Comment