Wednesday, 2 June 2021

সমাস

প্রঃ সমাস কাকে বলে? উত্তরঃ সমাস কথার অর্থ হল ‘সংক্ষেপ’। সংক্ষিপ্তভাবে বললে, সমাস হল একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা সুন্দর করে বলবার উদ্দেশ্যে পরস্পর অর্থস

সমাস

সমাস

প্রঃ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ সমাস কথার অর্থ হল ‘সংক্ষেপ’। সংক্ষিপ্তভাবে বললে, সমাস হল একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা সুন্দর করে বলবার উদ্দেশ্যে পরস্পর অর্থসম্বন্ধ যুক্ত দুই বা ততোধিক পদকে এক পদে পরিণত করা হয়।

প্রঃ সমাস শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ সমাস শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল ‘এক হওয়া’ বা ‘সংক্ষেপ’। আবার, সমাসের ব্যাকরণগত অর্থ হল ‘একপদীকরণ’ বা ‘সংক্ষিপ্তকরণ’। সমাস শব্দের বিভিন্ন বিশ্লেষণগুলো হচ্ছে-

১। প্রত্যয় – সম্-অস+অ (ঘঞ)

২। সন্ধি –সম+আস

৩। সমাস – সম্ (এক) আস (হওয়া) – এক হওয়া।

প্রঃ সমাস পড়ার প্রয়োজনীয়তা কী?

উত্তরঃ ব্যাকরণ যেমন ভাষার বিভিন্ন কৌশলকে বিশ্লেষণ করে থাকে, তেমনি ব্যাকরণ ভাষাকে সুন্দর অ সুশৃঙ্খল করে তোলে। সেই লক্ষ্যে বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে বাক্যকে সুন্দর করে তুলতে, আমাদের সমাস সম্বন্ধে পড়ার ও জানার এবং সমাস নির্ণয় করার নিয়ম শেখার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে।  

প্রঃ সমাস কীভাবে ভাষাকে সমৃদ্ধ করে?

উত্তরঃ যে কোন ভাষারই সম্পদ হল সেই ভাষার শব্দ ভাণ্ডার অর্থাৎ শব্দ সংখ্যা। সমাসে অর্থ সম্বন্ধযুক্ত দুটি শব্দ বা পদ মিলে অথবা একটি উপসর্গ ও একটি পদ মিলে নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয়। এইভাবে সমাস ভাষাকে সমৃদ্ধ করে, ভাষার শব্দ সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

প্রঃ সমাস ও সন্ধির মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো কী?

উত্তরঃ সমাস অর্থ সম্বন্ধপূর্ণ একাধিক শব্দের মিলন। সন্ধি পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি ধ্বনির মিলন।

সমাস ও সন্ধির সাদৃশ্য – দুটিই বাক্ সীমিত ও সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।

সমাস ও সন্ধির বৈসাদৃশ্যঃ  

১। সন্ধি বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনে হয়। সমাস পদের সঙ্গে পদের মিলনে হয়।

২। সন্ধিতে মিলন উচ্চারণভিত্তিক। সমাসে মিলন অর্থভিত্তিক।

৩। সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না। সমাসে অলোপ বা অলুক সমাস ছাড়া বিভক্তি লোপ পায়।

প্রঃ সমাসের উপাদান বা সমাস-সম্পর্কিত সংজ্ঞাগুলো কী কী?

উত্তরঃ সমাসের উপাদান বা সমাস-সম্পর্কিত সংজ্ঞাগুলো হলঃ

১। ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহ বাক্য বা সমাস বাক্য।

২। সমস্ত পদ

৩। সমস্যমান পদ।

৪। পূর্বপদ।

৫। পরপদ বা উত্তর পদ। 

সমাস

প্রঃ ব্যাসবাক্য, বিগ্রহ বাক্য বা সমাস বাক্য বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ যে বাক্যাংশ থেকে সমাসের মাধ্যমে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে ব্যাসবাক্য, বিগ্রহ বাক্য বা সমাস বাক্য বলে। ‘ব্যাসবাক্য’ শব্দের অর্থ হল বিস্তৃত বাক্য বা বিশ্লেশণকারী বাক্য। যেহেতু এই বাক্যের দ্বারা সমস্তপদকে বিশ্লেষণ করা যায় তাই এই বাক্যের নাম ব্যাসবাক্য। আবার, ‘বিগ্রহ’ শব্দের অর্থ হল বিশেষ রূপ। যেহেতু ব্যাসবাক্য সমস্তপদের মূল অর্থকে বিশ্লেষণ করার জন্য বিশেষ রূপ ধারণ করে বাক্য গঠন করে, তাই ব্যাসবাক্যকে বিগ্রহ বাক্য বলে।  

প্রঃ সমস্তপদ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ ব্যাসবাক্য থেকে সমাসের মাধ্যমে যে নতুন শব্দ তৈরি করা হয়, তাকে সমস্তপদ বলা হয়। অন্যভাবে বললে, সমাসে একাধিক পদ মলিত হয়ে যে একটি নতুন পদ গঠন করে, তাকে সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ বলে। যেমন – দশ আনন যাহার = দশানন। এখানে ‘দশানন’ পদটি সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ।

প্রঃ সমস্যমান পদ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ যে সকল পদ একত্রিত হয়ে সমাস সংগঠিত হয়, তাদের প্রত্যেকটি পদকে সমস্যমান পদ বলে। যেমন - দশ আনন যাহার = দশানন। এখানে ‘দশ’ ও ‘আনন’ হল সমস্যমান পদ এবং ‘যাহার’ হল সমস্যমান সহায়ক অন্য পদ। 

প্রঃ পূর্বপদ কী?

উত্তরঃ ব্যাসবাক্যে সমস্যমান পদগুলির মধ্যে যে পদটি প্রথমে বা আগে থাকে তকে ‘পূর্বপদ’ বলে। যেমন - দশ আনন যাহার = দশানন। এখানে ‘দশ’ পূর্বপদ।

প্রঃ পরপদ বা উত্তরপদ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ ব্যাসবাক্যে সমস্যমান পদগুলির মধ্যে যে পদটি পরে বা শেষে থাকে তকে ‘পরপদ’ বলে। অন্যভাবে বললে, সমস্তপদের শেষ সমস্যমান পদই পরপদ বা উত্তরপদ। যেমন - দশ আনন যাহার = দশানন। এখানে ‘আনন’ পরপদ বা উত্তরপদ।

সমাস

প্রঃ সমাসের শ্রেণী বিভাগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ বাংলা ব্যাকরণে সমাসকে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ

১। সংস্কৃতে সমাসকে চারটি ভাগে দেখা যায়ঃ

ক) দ্বন্দ্ব    খ) তৎপুরুষ     গ) বহুব্রীহি      ঘ) অব্যয়ীভাব।

২। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সমাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেনঃ

ক) সংযোগমূলক সমাস – দ্বন্দ্ব সমাস।

খ) ব্যাখ্যামূলক সমাস – কর্মধারয় সমাস, তৎপুরুষ সমাস, দ্বিগু সমাস

গ) বর্ণনামূলক সমাস – বহুব্রীহি সমাস।

৩। আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পদের অর্থগত দিক থেকে সমাসকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ

ক) উভয় পদের অর্থপ্রাধান্য – দ্বন্দ্ব।

খ) পরপদের অর্থপ্রাধান্য - তৎপুরুষ, কর্মধারয়, দ্বিগু।

গ) পূর্ব পদের অর্থপ্রাধান্য – অব্যয়ীভাব।

ঘ) অন্য পদের অর্থপ্রাধান্য – বহুব্রীহি।

প্রঃ সমাসের প্রধান ভাগ কয়টি ও কী কী?

উত্তরঃ সমাসের প্রধান ভাগ ছয়টিঃ দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি এবং অব্যয়ীভাব সমাস।

প্রঃ  ব্যতিক্রমী সমাস কয়টি ও কী কী?

উতরঃ ব্যতিক্রমী সমাস তিনটিঃ অলোপ বা অলুক সমাস, নিত্য সমাস, বাক্যাশ্রয়ী সমাস।

প্রঃ দ্বন্দ্ব সমাস বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ দ্বন্দ্ব শব্দের বুৎপত্তি হল - দ্বি + দ্বি । দ্বন্দ্ব শব্দের দুই প্রকার অর্থ রয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হল 'মিলন' এবং প্রচলিত অর্থ হল 'কলহ' বা 'বিবাদ'। আর ব্যাকরণসম্মত অর্থ হল - যুগ্ম বা জোড়া। 

যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ - উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এই সমাসে ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ স্থাপনে 'ও' 'এবং' 'আর' - এই তিনটি অব্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন - পিতা ও মাতা = মাতাপিতা। এখানে, পূর্বপদ 'মাতা' এবং পরপদ 'পিতা' । দুটি পদকেই সমান প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। 

প্রঃ দ্বন্দ্ব সমাস কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ দ্বন্দ্ব সমাস ছয় প্রকারঃ

১। সমার্থক দ্বন্দ্ব।

২। বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব।

৩। একশেষ দ্বন্দ্ব।

৪। বহুপদনিষ্পন্ন দ্বন্দ্ব।

৫। ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব।

৬। বিকল্প দ্বন্দ্ব।


প্রঃ সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলি পরস্পর সমার্থক হয়, তাকে সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন - ১। ছাই ও ভস্ম = ছাইভস্ম। ২। দয়া আর মায়া = দয়ামায়া। ৩। পাহাড় এবং পর্বত = পাহাড় - পর্বত।

প্রঃ বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস  কাকে বলে?

উত্তরঃ যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলি পরস্পর বিপরীত অর্থ বহন করে, তাকে বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন - ১। আদি ও অন্ত = আদ্যন্ত। ২। বাঁচা আর মরা = বাঁচামরা। ৩। অগ্র ও পশ্চাৎ = অগ্রপশ্চাৎ।

প্রঃ একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলি সমাসবদ্ধ হয়ে বহুবচনান্ত একটি পদে পরিণত হয়, তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন - ১। আমি, তুমি ও সে = আমরা (বহুবচন)। ২। তুমি ও সে = তোমরা (বহুবচন)।

প্রঃ বহুপদনিষ্পন্ন দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে দ্বন্দ্ব সমাস বহুপদের মিলনে নিস্পন্ন হয় তাকে বহুপদনিষ্পন্ন দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন - ১। স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল = স্বর্গ - মর্ত্য - পাতাল। ২। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ও তারা = চন্দ্র - সূর্য - গ্রহ - তারা।

প্রঃ ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে দ্বন্দ্ব সমাস অনুরূপ বা সমজাতীয় ভাব প্রকাশের জন্য অনুচর, সহচর, প্রতিচর, বিকার, অনুকার প্রভৃতি অর্থপ্রকাশক শব্দের মিলনে হয়, তাকে ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমনঃ

১। সহচর - ঘর ও বাড়ি = ঘরবাড়ি।

২। অনুচর - ছল ও চাতুরি = ছলচাতুরি।

৩। প্রতিচর - রাজা ও রাণী = রাজারাণী

৪। বিকার - ঠাকুর এবং ঠুকুর = ঠাকুরঠুকুর।

৫। অনুকার - জল এবং টল = জলটল। 

প্রঃ বিকল্প দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ বিকল্প হিসাবে গৃহীত হয়, তাকে বিকল্প দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন - ১। হার বা জিত = হারজিত। ২। কম বা বেশি = কমবেশি। ৩। সাত কিংবা পাঁচ = সাতপাঁচ। 

প্রঃ কর্মধারয় সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ কর্মধারয় শব্দের অর্থ হল 'কর্ম' বা 'বৃত্তি' ধারণকারী। কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। মূলত, এই সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদ পূর্বপদ ও বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদ পরপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যাসবাক্যটিতে ঐ বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদ সম্পর্কে কিছু বলা হয়, অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। যেমন - নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম। এখানে, পূর্বপদ 'নীল' বিশেষণ এবং 'পরপদ 'পদ্ম' বিশেষ্য। ব্যাসবাক্যে 'পদ্ম' সম্পর্কে বলা হয়েছে যে পদ্মটি নীল রঙের। অর্থাৎ,'পদ্ম' বা পরপদের অর্থই প্রধান। পরপদ ছাড়া পূর্বপদের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। সুতরাং, এটি কর্মধারয় সমাস।  

প্রঃ কর্মধারয় সমাসের বিশেষ নিয়মগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ কর্মধারয় সমাসের বিশেষ নিয়মগুলি হলঃ

১। দুইটি বিশেষণ একই বিশেষ্য বোঝালে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন - যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর। এখানে পরবর্তী বিশেষণটি (অর্থাৎ পরপদ) বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বলে এটা কর্মধারয় সমাস।

২। দুটি বিশেষ্য একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে সেটিও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন - যিনি জজ তিনিই সাহেব = জজসাহেব। এখানে পরবর্তী বিশেষ্যটি (অর্থাৎ পরপদ) বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বলে এটা কর্মধারয় সমাস।

৩। কাজে পরম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ বা ক্রিয়াবাচক বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন - আগে ধোয়া পরে মোছা - ধোয়ামোছা। এখানে মোছা কাজটি (অর্থাৎ পরপদ) বেশি গুরুত্ব পূর্ণ।

৪। পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে তা পুরুষবাচক হয়ে যাবে। যেমন - সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা।

৫। বিশেষণবাচক 'মহান' বা 'মহৎ' শব্দ পূর্বপদ হলে 'মহা' হয়। যেমন - মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান।

৬। পূর্বপদে 'কু' বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে 'কু' 'কৎ' হয়। যেমন - কু যে অর্থ = কদর্থ।

৭। পরপদে 'রাজা' থাকলে 'রাজ' হয়। যেমন - মহান যে রাজা = মহারাজ।

৮। বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষ্য আগে এসে বিশেষণ পরে চলে যায়। যেমন - সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ।

 প্রঃ কর্মধারয় সমাস কত প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ কর্মধারয় সমাস মূলত পাঁচ প্রকার – সাধারণ কর্মধারয় সমাস, মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস, উপমান কর্মধারয় সমাস, উপমিত কর্মধারয় সমাস, রূপক কর্মধারয় সমাস।

প্রঃ সাধারণ কর্মধারয় সমাসের নিয়মগুলো লেখো।

উত্তরঃ ১। বিশেষ্য + বিশেষ্য

দুটি বিশেষ্য পদ যোগে একটি বিশেষ্য পদ তৈরি হয়। যেমন – যিনি রাম তিনিই কৃষ্ণ = রামকৃষ্ণ।

২। বিশেষণ + বিশেষণ

দুটি বিশেষণই একই ব্যক্তি বা বস্তুতে উপস্থিত বোঝাবে। যেমন – কাঁচা অথচ মিঠে = কাঁচামিঠে (একই ফল বোঝাচ্ছে)।

৩। বিশেষণ + বিশেষ্য

বিশেষণ ও বিশেষ্য পদ পূর্বপদ ও পরপদ রূপে বসে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে প্রকাশ করে। যেমন – প্রিয় যে সখা = প্রিয়সখা। 

প্রঃ মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস সম্পর্কে বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যে অবস্থিত পদ লোপ পায়। যেমন - জীবনহানির আশঙ্কায় বীমা = জীবনবীমা। 

[ তৎপুরুষ সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত বিভক্তি-স্থানীয় অনুসর্গ লোপ পায় আর মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যে অবস্থিত পদ লোপ পায়। ]

প্রঃ উপমান কর্মধারয় সমাস বলতে কী বোঝ।

উত্তরঃ উপমানের (যার সাথে তুলনা করা হয়) সঙ্গে সাধারণ ধর্মবাচক পদের সমাসকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলা হয়। যেমন - শঙ্খের  ন্যায় শুভ্র = শঙ্খশুভ্র। 

[ এখানে, উপমান পদটি প্রথমে বসে, তারপর সাদৃশ্যবাচক শব্দ এবং শেষে সাধারণ ধর্মবাচক পদ বসে। উপমান + সাদৃশ্যবাচক শব্দ + সাধারণ ধর্মবাচক পদ = উপমান কর্মধারয় সমাস।]

প্রঃ উপমান, উপমেয় এবং সাধারণ ধর্ম বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হল, তাকে বলা হয় উপমেয়। আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান। 

উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম। যেমন - অরুণের ন্যায় রাঙা প্রভাত। এখানে, 'প্রভাত'কে 'অরুণ'র মতো 'রাঙা' বলে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং, এখানে 'প্রভাত' উপমেয়, 'অরুণ' উপমেয় এবং প্রভাত আর অরুণের সাধারণ ধর্ম হল 'রাঙা'। 

প্রঃ উপমিত কর্মধারয় সমাস বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ উপমেয় (যাকে তুলনা করা হয়) - র সাথে উপমানের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন - নয়ন কমলের ন্যায় - নয়নকমল।

[এই সমাসে কোন সাধারণ ধর্মবাচক পদের উল্লেখ থাকে না। উপমেয় + উপমান + সাদৃশ্যবাচক শব্দ = উপমিত কর্মধারয় সমাস।]

প্রঃ রূপক কর্মধারয় সমাস বলতে কী বোঝ? 

উত্তরঃ যে সমাসে উপমেয় ও উপমানের মধ্যে অভেধ কল্পনা করা হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন - যৌবন রূপ কুসুম = যৌবনকুসুম।

[এখানে উপমেয় ও উপমানের মধ্যে 'রূপ' শব্দটি বসে। উপমেয় + রূপ + উপমান = রূপক কর্মধারয় সমাস।

প্রঃ বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির কোনোটিরই অর্থ প্রধানভাবে না বুঝিয়ে অন্য কোন অর্থ প্রধানভাবে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন - বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি (সরস্বতী)।

[বহুব্রীহি সমাস, বিশেষ করে কিছু ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস ও উপপদ তৎপুরুষ সমাসের সমস্ত পদ প্রায় একইরকম হয়। ফলে এদের সমস্ত পদ দেখে আলাদা করে চেনার তেমন কোন উপায় নেই। এগুলোর সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তাই ব্যাসবাক্য ও সমাস নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর পরীক্ষায় মূলত এগুলো উপপদ তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ হিসেবেই আসে।]

প্রঃ বহুব্রীহি সমাস কত প্রকারের ও কী কী?

উত্তরঃ বহুব্রীহি সমাস ৭ প্রকার। এগুলো হল - 

১। সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস।

২। ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস।

৩। নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস।

৪। মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস।

৫। ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস।

৬। সহার্থক বহুব্রীহি সমাস।

৭। সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি সমাস।

প্রঃ সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয়। এখানে উভয় পদেই শূন্য বিভক্তি থাকায় এর নাম সমানাধিকরণ। যেমন - দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যাহার = দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ছিন্ন হয়েছে শাখা যার = ছিন্নশাখা (বৃক্ষ)। সমান পতি যাদের = সপত্নী।

প্রঃ ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ এই বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ বিশেষণ হয় না। এখানে সমস্যমান পদ দুটি পৃথক বিভক্তিযুক্ত হওয়ায় এর নাম ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস। যেমন - মিলন অন্তে যার = মিলনান্তক। অন্য বিষয়ে মন যার = অন্যমনস্ক। আশীতে (দন্ত) বিষ যার = আশীবিষ (সর্প)।

প্রঃ নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ নঞর্থক বা নাবাচক পদের সঙ্গে বিশেষ্যপদের যে বহুব্রীহি সমাস হয় তাকেই নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন - নেই অর্থ যার = নিরর্থক। নিঃ (নাই) রদ (দন্ত) যার = নীরদ।

প্রঃ মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ যে বিহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত পদের লোপ হয় তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন - ধর্মের (আদর্শের) উদ্দেশ্যে ঘট স্থাপনপূর্বক যে আন্দোলন = ধর্মঘট। বিম্বের ন্যায় রঞ্জিত অধর যে নারীর = বিম্বাধরী।

[এই সমাসে বেশিরভাগ স্থানে উপমানের সঙ্গে সমাস হয়, তাই একে উপমানাত্মক বহুব্রীহি সমাসও বলা হয়। আবার ব্যাসবাক্যটি ব্যাখ্যামূলক হওয়ায় এর অপর একটি নাম ব্যাখ্যাত্মক বহুব্রীহি সমাস।

প্রঃ ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ যে বহুব্রীহি সমাসে পরস্পর একই জাতীয় ক্রিয়ার বিনিময় হয় তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন - কেশে কেশে আকর্ষণ করে যে যুদ্ধ = কেশাকেশি। পরস্পরের মধ্যে আড়ি = আড়াআড়ি।

প্রঃ সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ পূর্বপদ বিশেষ্যের সঙ্গে সহার্থক পরপদের বহুব্রীহি সমাসকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন - শ্রদ্ধার সহিত বর্তমান = সশ্রদ্ধ। প্রতিভার সহিত বর্তমান = সপ্রতিভ।

[পূর্বপদ যদি বিশেষণ হয় তবে তা সহার্থক বহুব্রীহি সমাস হয় না।]

প্রঃ সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি সমাস বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ হয় তাকে সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন - একদিকেই চোখ যার = একচোখা। দশ আনন যার = দশানন।

প্রঃ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ তৎ শব্দাংশের অর্থ হল 'তার' এবং তৎপুরুষ শব্দের অর্থ হল 'তার সম্বন্ধীয় পুরুষ' বা 'তার পুরুষ' বা 'তস্যপুরুষ'। যে সমাসে পূর্বপদের কারকের বিভক্তিচিহ্ন বা বিভক্তিস্থানীয় অনুসর্গের লোপ হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - রথকে দেখা = রথদেখা। লোককে দেখানো = লোকদেখানো। 

প্রঃ তৎপুরুষ সমাস কত প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ তৎপুরুষ সমাস এগারো প্রকার। ক্রমেঃ

১। কর্ম তৎপুরুষ।

২। করণ তৎপুরুষ।

৩। অপাদান তৎপুরুষ।

৪। নিমিত্ত তৎপুরুষ।

৫। অধিকরণ তৎপুরুষ।

৬। সম্বন্ধ তৎপুরুষ।

৭। ব্যাপ্তার্থক তৎপুরুষ।

৮। উপপদ তৎপুরুষ।

৯। নঞ তৎপুরুষ।

১০। অকারক বা উপকারক তৎপুরুষ।

১১। উপসর্গ তৎপুরুষ।

প্রঃ কর্ম তৎপুরুষ সমাস বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের কর্ম কারকের বিভক্তি চিহ্ন (জেমন ‘কে’) লোপ পায়, তাকে কর্ম তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন -  মালাকে বদল = মালাবদল। ছেলেকে ভুলানো = ছেলেভুলানো।

প্রঃ  করণ তৎপুরুষ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের করণ কারকের বিভক্তি চিহ্ন ('এ' 'য়' 'তে')/ অনুসর্গ ('দ্বারা', 'দিয়া', 'কতৃক') লোপ পায়, তাকে করণ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - আশা দ্বারা আহত = আশাহত। জরায় জীর্ণ = জরাজীর্ণ। 

প্রঃ অপাদান তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের অপাদান কারকের বিভক্তি চিহ্ন ('এ', 'তে') / অনুসর্গ ('হইতে', 'থেকে'। 'চেয়ে') লোপ পায়, তাকে অপাদান তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - জল হইতে আতঙ্ক = জলাতঙ্ক। মৃত্যুতে ভয় = মৃত্যুভয়।

প্রঃ অপাদান তৎপুরুষ সমাসকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে কেন?

উত্তরঃ অপাদান তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, চেয়ে, থেকে প্রভৃতি) লোপ পায়, তাই একে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। 

প্রঃ নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের নিমিত্ত/জন্য/উদ্দেশ্য প্রভৃতি নিমিত্তবাচক অংশগুলো লোপ পায়, তাকে নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - স্বদেশের জন্য প্রেম = স্বদেশপ্রেম। শিশুর নিমিত্ত সাহিত্য = শিশুসাহিত্য।

 প্রঃ অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের অধিকরণ কারকের বিভক্তি চিহ্ন ('এ', 'য়', 'এতে') লোপ পায়, তাকে অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - গীতায় উক্ত = গীতোক্ত। ওষ্ঠে আগত = ওষ্ঠাগত।

প্রঃ সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের সম্বন্ধের বিভক্তি চিহ্ন ('র', 'এর', 'দের') লোপ পায়, তাকে সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - বসন্তের সখা = বসন্তসখা (কোকিল)। মন্ত্রীদের সভা = মন্ত্রীসভা। 

প্রঃ ব্যাপ্তার্থক তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসে 'ব্যাপিয়া' বা বিস্তর অর্থ বোঝায়, তাকে ব্যাপ্তার্থক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী। চিরকাল ব্যাপিয়া সুন্দর = চিরসুন্দর। 

প্রঃ উপপদ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসে উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - জলে চরে যা = জলচর। পঙ্কে জন্মে যা = পঙ্কজ। 

প্রঃ নঞ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসে নঞ অব্যয়কে পূর্বপদ করে, উত্তরপদ বিশেষ্য বা বিশেষণের সঙ্গে সমাস হয়, তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - আবশ্যক নয় = অনাবশ্যক। আস্থা নেই = অনাস্থা।

[উত্তরপদের প্রথম বর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ হলে, 'নঞ' স্থানে 'অ' হয় আর স্বরবর্ণ হলে 'অন্' হয়।]

প্রঃ অকারক বা উপকারক তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসে 'গত', 'প্রাপ্ত', 'আপন্ন', 'আশ্রিত', 'আরূঢ়' 'অতীত' প্রভৃতি শব্দযোগে পূর্বপদের 'কে' বিভক্তি চিহ্ন লোপ পায়, তাকে অকারক বা উপকারক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - যৌবনকে প্রাপ্ত = যৌবনপ্রাপ্ত। অশ্বে আরূঢ় = অশ্বারূঢ়। 

প্রঃ উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদ উপসর্গের সঙ্গে পরপদ বিশেষ্য বা বিশেষণের সমাস হয়, তাকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন - আত্মাকে অধি (অধিকার করে) = অধ্যাত্ম। 

[উপসর্গ তৎপুরুষ সমাসকে অব্যয়ীভাব সমাসও বলা হয়।

 প্রঃ দ্বিগু সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ 'দ্বিগু' শব্দের অর্থ হল - দুই গরুর সমাহার বা দুটি গরুর বিনিময়ে কেনা। 

সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন - অষ্ট ধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু। 

এখানে পূর্বপদ 'অষ্ট' একটি সংখ্যাবাচক বিশেষ, আর পরপদ 'ধাতু' একটি বিশেষ্য। অষ্ট ধাতুর মিলন বা সমাহার অর্থে সমাস হয় 'অষ্টধাতু' সমস্ত পদটি তৈরি হয়েছে, যাতে 'ধাতু' সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে। 

[দ্বিগু সমাসের সঙ্গে কর্মধারয় সমাসের বেশ মিল রয়েছে। মনে রাখতে হবে, দ্বিগু সমাসে বিশেষণ পদটি সর্বদাই সংখ্যাবাচক হয় এবং সমাস হয় মিলন বা সমাহার অর্থে।]

প্রঃ দ্বিগু সমাস কত প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ দ্বিগু সমাস দুই প্রকার - ১। তদ্বিতার্থক দ্বিগু সমাস।  ২। সমাহার দ্বিগু সমাস।

প্রঃ তদ্বিতার্থক দ্বিগু সমাস কাকে বলে?

উত্তরঃ যে দ্বিগু সমাসে তদ্ধিত প্রত্যয় নিষ্পন্ন পদ গঠিত হয় তাকে তদ্বিতার্থক দ্বিগু সমাস বলে। যেমন - দুই গরুর মুল্যে কেনা = দ্বিগু। তিন কড়ির মুল্যে কেনা = তিনকড়ি।

প্রঃ সমাহার দ্বিগু সমাস কাকে বলে। 

উত্তরঃ যে দ্বিগু সমাসে এককালে অনেক বস্তু বা ব্যক্তির সমাহার বা সমষ্টি বোঝায়, তাকে সমাহার দ্বিগু সমাস বলে। যেমন - সপ্ত অহের সমাহার = সপ্তাহ। নব রত্নের সমাহার = নবরত্ন।

প্রঃ অব্যয়ীভাব সমাস বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ সমাসের পূর্বপদ হিসেবে যদি অব্যয় পদ ব্যবহার করা হয়, এবং সেই অব্যয়ের অর্থই প্রধান হয়, তবে সেই সমাসকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন - মরণ পর্যন্ত = আমরণ। 

এখানে পূর্বপদ হিসেবে পর্যন্ত অর্থে 'আ' উপসর্গকে আর পরপদ 'মরণ' ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে 'আ' উপসর্গটিসমস্ত পদটিকে নতুন অর্থ দিয়েছে। অর্থাৎ, এখানে 'আ' উপসর্গ বা অব্যয় বা পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে।  

[উপসর্গ একধরনের অব্যয়সূচক শব্দাংশ। উপসর্গ বচন বা লিঙ্গ ভেদে পরিবর্তিত হয় না কিংবা বাক্যের অন্য কোন পদের পরিবর্তনেও এর কোন পরিবর্তন হয় না। এরকম আরেকটি অব্যয়সূচক শব্দাংশ হল অনুসর্গ।]


 

 





Rajesh Konwar

Author & Editor

Has laoreet percipitur ad. Vide interesset in mei, no his legimus verterem. Et nostrum imperdiet appellantur usu, mnesarchum referrentur id vim.

0 comments:

Post a Comment