Sunday, 13 October 2019

সন্ধি

'সন্ধি' কথাটির সাধারণ অর্থ হ'ল, মিলন, জোড়, গাঁট বা Joint. ব‍্যাকরণেও সন্ধি বলতে যা বোঝানো হয়, তার সাথে সন্ধি শব্দের সাধারণ অর্থের মিল আছে। আমরা যে সব

সন্ধি


সন্ধি এবং স্বরসন্ধির সূত্র, উদাহরণ ও ব‍্যতিক্রম

সন্ধির ধারণা ও স্বরসন্ধি

সংজ্ঞা ও ধারণা

'সন্ধি' কথাটির সাধারণ অর্থ হ', মিলন, জোড়, গাঁট বা Joint. ব‍্যাকরণেও সন্ধি বলতে যা বোঝানো হয়, তার সাথে সন্ধি শব্দের সাধারণ অর্থের মিল আছে। আমরা যে সব ধ্বনি উচ্চারণ করি, সেগুলি সাধারণত একা একা উচ্চারিত হয় না। বেশিরভাগ সময় একাধিক ধ্বনি পর পর উচ্চারণ করতে হয়। তবেই আমরা মনের একটি ভাব প্রকাশ করতে পারি। যেমন, "শরৎ চলে এসেছে" কথাটা বলার জন‍্য আমাদের শ্,,র্,,চ্,,ল্,, ,স্,,ছ্,এ- এতগুলো ধ্বনি পর পর উচ্চারণ করতে হয়। মজার ব‍্যাপার হলো, এখানে আমরা জানি যে, আমরা ৩টে আলাদা আলাদা পদ উচ্চারণ করছি। কিন্তু আমাদের বাগ্-যন্ত্র অতশত বোঝে না। বাগ্-যন্ত্র তার নিজের নিয়মে শুধু পর পর ধ্বনিগুলি উচ্চারণ করার কাজটি করতে থাকে। তার কাছে পুরো ব্যাপারটা একটা যান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এইরকম যান্ত্রিক ভাবে উচ্চারণ করার সময় পাশাপাশি দুটি শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে বাগ্-যন্ত্র অনেক সময় একটি শব্দের শেষ ধ্বনির সাথে পরের শব্দের প্রথম ধ্বনিটিকে জুড়ে ফেলে। যেমন : "শরৎ চলে এসেছে" বলতে গিয়ে বাগ্-যন্ত্র বলে ফেলে, "শরচ্চলেএসেছে"। 'শরৎ'-এর ৎ আর 'চলে'-র চ্ একসাথে মিশে যায় এবং মিশে গিয়ে 'চ্চ' হয়ে যায়। এই ঘটনাটাই সন্ধি। সন্ধি কোনো মানুষের মাথা খাটিয়ে তৈরি করা ব‍্যাপার নয়। সন্ধি আমাদের বাধ‍্যবাধকতা। আমাদের বাগ্-যন্ত্র এটা করে ফেলে; না করে থাকতে পারে না।

 

তার মানে আমরা দেখলাম, দুটো পৃথক শব্দ (বা পদ) পাশাপাশি উচ্চারিত হ‌ওয়ার সময় একটার শেষে আর অপরটার গোড়ায় অবস্থিত দুটো ধ্বনি মিশে যায়। এর ফলে কখনও তাদের মধ‍্যে একটা বদলে যায়, কখন‌ও দুটোই বদলে যায় আবার কখন‌ও দুটোয় মিলেমিশে একটা নতুন ধ্বনি তৈরি করে। এই ঘটনাকে সন্ধি বলে।

 

কিন্তু কথা হচ্ছে, সন্ধির সংজ্ঞা বলতে গিয়ে কি আমরা এত বড় করে বলবো? ব্যাকরণ এমনিতেই লোকে পড়তে চায় না। তার উপর বড় বড় সংজ্ঞা লেখাতে গেলে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা আর‌ও বেশি ভয় পেয়ে যাবে। ধারণা স্পষ্ট করার জন‍্য‌ই এতটা বড় করে বলা।

 

সন্ধির সংজ্ঞা: 

 

পাশাপাশি উচ্চারিত দুটি শব্দের (বা শব্দাংশ বা পদের) প্রথমটির শেষ ধ্বনি ও পরেরটির প্রথম ধ্বনির

মিলনকে সন্ধি বলে।

সন্ধির বিশ্লেষণ

সন্ধিবিচ্ছেদ করলে আমরা দেখতে পাই দুটি শব্দকে যোগ করা হয়েছে। কিন্তু আসলে যুক্ত হয় প্রথম শব্দের শেষ ধ্বনির সাথে দ্বিতীয় শব্দের প্রথম ধ্বনিটি।


হিম+আলয় = হিমালয়। এই সন্ধিটি বর্ণবিশ্লেষণ করে দেখলে ব‍্যাপারটি স্পষ্ট হবে।

হ্+ই+ম্+ অ + আ +ল্+অ+য়্+অ ।

উপরের রেখাঙ্কিত স্বর দুটি যুক্ত হচ্ছে।  বাকি ধ্বনিগুলো সন্ধিতে কোনো ভূমিকা পালন করে না, তাদের কোনো পরিবর্তন‌ও হয় না। 'হিমালয়' শব্দটি ভাঙলে দেখা যাবে ঐ দুটি স্বর মিলিত হয়ে '' হয়ে গেছে এবং

বাকি ধ্বনিগুলি যেমন ছিল তেমনি আছে।

হ্+ই+ম্++ল্+অ+য়্+অ।

স্বরসন্ধি

স্বরধ্বনির সাথে স্বরধ্বনির মিলনকে স্বরসন্ধি বলে।

অর্থাৎ, স্বরসন্ধিতে অংশগ্রহণকারী ধ্বনিগুলির দুটিকেই স্বর হতে হবে। হিম+আলয়=হিমালয়, এটি একটি স্বরসন্ধির উদাহরণ।

স্বরসন্ধির সূত্র

সূত্র ১: অ/আ + অ/আ = আ

 

অ বা আ-এর সঙ্গে অ বা আ যুক্ত হলে দুয়ে মিলে আ হয়। 

 

 

অর্থাৎ সন্ধিতে অংশগ্রহণকারী ধ্বনি দুটির মধ‍্যে প্রথমটি অ বা আ হতে হবে এবং দ্বিতীয়টিও অ বা আ হতে হবে। 

 

উদাহরণ : হিম+অচল = হিমাচল 

 

বর্ণ বিশ্লেষণ করে দেখি : 

 

হ্+ই+ম্+ + +চ্+অ+ল্+অ 

= হ্+ই+ম্++চ্+অ+ল্+অ । 

 

এখানে দেখা যাচ্ছে, হিম শব্দের শেষে অবস্থিত অ এবং অচল শব্দের প্রথমে অবস্থিত অ যুক্ত হয়ে আ হয়েছে। 

 

অন‍্যান‍্য উদাহরণ : 

 

বিন্ধ‍্য + অচল = বিন্ধ‍্যাচল

মোহ + অন্ধ = মোহান্ধ

মহা + আকাশ = মহাকাশ

তুষার + আবৃত = তুষারাবৃত

প্রেম + আস্পদ = প্রেমাস্পদ

নিত‍্য + আনন্দ = নিত‍্যানন্দ

চিত্র + অর্পিত = চিত্রার্পিত
সর্বস্ব + অন্ত = সর্বস্বান্ত

 

সূত্র ২ : ই/ঈ+ই/ঈ = ঈ

ই বা ঈ-এর সঙ্গে ই বা ঈ যুক্ত হ'লে দুয়ে মিলে ঈ হয়।

 

এই সূত্র‌টি অনেকটা আগের সূত্র‌টির মতোই। দুটি এক‌ই ধরণের স্বর যুক্ত হয়ে একটি দীর্ঘস্বর সৃষ্টি করছে।

 

উদাহরণ: 

 

রবি+ইন্দ্র= রবীন্দ্র (ই+ই=ঈ)

গিরি+ঈশ= গিরীশ (ই+ঈ=ঈ)-অর্থ হিমালয়, গিরিরাজ।

সতী+ঈশ= সতীশ (ঈ+ঈ=ঈ)-অর্থ সতীনাথ শিব।

সতী+ইন্দ্র = সতীন্দ্র (ঈ+ই =ঈ) - অর্থ সতীনাথ।

পরি+ঈক্ষা = পরীক্ষা

অভি+ঈক্ষা= অভীক্ষা

মণি+ইন্দ্র = মণীন্দ্র
প্রতি+ঈক্ষা = প্রতীক্ষা

সূত্র ৩ : উ/ঊ+উ/ঊ = ঊ

উ বা ঊ-এর সাথে উ বা ঊ যুক্ত হ'লে দুয়ে মিলে ঊ হয়।

 

এই সূত্রটিও আগের দুটি সূত্রের মতো।

 

উদাহরণ:

 

কটু + উক্তি = কটূক্তি

ভূ + ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব

বধূ + উৎসব = বধূৎসব

 

সূত্র ৪ : অ/আ + ই/ঈ = এ

অ বা আ-এর সাথে ই বা ঈ যুক্ত হ'লে দুয়ে মিলে এ হয়।

 

উদাহরণ :

 

গণ + ইন্দ্র = গণেন্দ্র (অ+ই)

মহা + ইন্দ্র = মহেন্দ্র (আ+ই)

গণ + ঈশ = গণেশ (অ+ঈ)

মহা + ঈশ = মহেশ (আ+ঈ)

দীন+ঈশ = দীনেশ (অর্থ: গরীবের ঈশ্বর)

দিন+ঈশ = দিনেশ (অর্থ: সূর্য)

নব + ইন্দু = নবেন্দু ( শুক্লপক্ষের প্রথম চাঁদ)

সূত্র ৫ : অ/আ + উ/ঊ = ও

অ বা আ-এর সঙ্গে উ বা ঊ যুক্ত হলে দুয়ে মিলে ও হয়।

 

উদাহরণ :

 

পর + উপকার = পরোপকার

কাল + ঊর্ধ্ব = কালোর্ধ্ব

কথা + উপকথন = কথোপকথন

চল + ঊর্মি = চলোর্মি
কাল+উত্তীর্ণ = কালোত্তীর্ণ
শুভ্র+উজ্জ্বল = শুভ্রোজ্জ্বল
উপর+উক্ত = উপরোক্ত

সূত্র ৬ : অ/আ + ঋ = অর্

অ বা আ-এর সঙ্গে ঋ যুক্ত হলে দুয়ে মিলে অর্ হয়।

 

উদাহরণ :

 

উত্তম + ঋণ = উত্তমর্ণ

 

একটু ভেঙে দেখি কী ভাবে 'অর্' আসছে :

উত্তমর্ণ = উ+ত্+ত্+অ+ম্+অ+র্+ণ্+অ। 

ম-এর শেষে যে '' আছে তার সাথে '' যুক্ত হয়ে 'অর্' (স্থূলাক্ষর) হয়েছে।

 

অধম + ঋণ = অধমর্ণ

মহা + ঋষি = মহর্ষি (আ+ঋ=অর্)। লক্ষ করার বিষয় : আ-এর সাথে ঋ যুক্ত হলেও 'অর'-ই আসছে। 

 

ব‍্যতিক্রম : ঋ ধ্বনিটি 'ঋত' শব্দের ঋ হলে 'অর্' না হয়ে 'আর্' হয়। যেমন :

 

শীত + ঋত = শীতার্ত

ক্ষুধা + ঋত = ক্ষুধার্ত

বেদনা + ঋত = বেদনার্ত 

সূত্র ৭ : অ/আ + এ/ঐ = ঐ

অ বা আ-এর সঙ্গে এ বা ঐ যুক্ত হলে দুয়ে মিলে ঐ হয়।

 

উদাহরণ :

 

জন + এক = জনৈক

মহা + ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য

সূত্র ৮ : অ/আ + ও/ঔ = ঔ

অ বা আ-এর সাথে ও বা ঔ যুক্ত হলে দুয়ে মিলে ঔ হয়।

 

উদাহরণ :

 

মহা + ওষধি = মহৌষধি

পরম + ঔষধ = পরমৌষধ

বন + ওষধি = বনৌষধি

সূত্র ৯ : ই/ঈ + অন‍্য স্বর = ই/ঈ > য-ফলা

ই বা ঈ-এর সাথে ই বা ঈ ব‍্যতীত অন‍্য স্বর যুক্ত হলে ই বা ঈ য-ফলায় পরিণত হয় এবং পরবর্তী স্বরটি য-ফলায় যুক্ত হয়।

 

অর্থাৎ

ই/ঈ + অ = য-ফলা

ই/ঈ + আ = য-ফলায় আ-কার

ই/ঈ + উ = য-ফলায় উ-কার

ই/ঈ + ঊ = য-ফলায় ঊ-কার

ই/ঈ + এ = য-ফলায় এ-কার

ই/ঈ + ও = য-ফলায় ও-কার 

 

উদাহরণ :

বি+আহত = ব‍্যাহত
প্রতি+আশা = প্রত‍্যাশা
প্রতি + এক = প্রত‍্যেক

প্রতি + আদেশ = প্রত‍্যাদেশ

প্রতি + ঊষ = প্রত‍্যূষ

আদি + অন্ত = আদ‍্যন্ত

অধি + আদেশ = অধ‍্যাদেশ

নদী + অম্বু = নদ‍্যম্বু

পরি + অন্ত = পর্যন্ত ( এখানে র্-টি রেফ্ হচ্ছে এবং য-ফলা না হয়ে য্ হচ্ছে। এক‌ই ব‍্যাপার।)

সূত্র ১০ : উ/ঊ + অন‍্য স্বর = উ/ঊ > ব-ফলা

উ বা ঊ-র সাথে উ বা ঊ ছাড়া অন‍্য স্বর যুক্ত হলে উ বা ঊ ব-ফলায় (অন্তঃস্থ ব) পরিণত হয় এবং পরবর্তী স্বরটি ব-ফলায় যুক্ত হয়। 

এই সূত্রটি অনেকটা আগের সূত্রটি‌র মত‌ই। 

 

 

উদাহরণ :

 

মনু + অন্তর = মন্বন্তর

অনু + এষণ = অন্বেষণ

মনু + আদি = মন্বাদি

সু + আগত = স্বাগত

অনু + অয় = অন্বয়

সূত্র ১১ : ঋ + অন‍্য স্বর = ঋ> র(র-ফলা)

ঋ-এর সাথে অন‍্য স্বর যুক্ত হলে ঋ র-তে পরিণত হয়। র র-ফলা রূপে পূর্ববর্তী ব‍্যঞ্জনে যুক্ত হয় এবং পরবর্তী স্বরটি র-ফলায় যুক্ত হয়।

 

উদাহরণ :

 

পিতৃ + আদেশ = পিত্রাদেশ

পিতৃ + আলয় = পিত্রালয়

মাতৃ + ইচ্ছা = মাত্রিচ্ছা

সূত্র ১২ : এ + অন‍্য স্বর = এ> অয়্ ; ঐ + অন‍্য স্বর = ঐ> আয়্ ; ও + অন‍্য স্বর = ও> অব্  ; ঔ + অন‍্য স্বর = ঔ> আব্

, , , ঔ এই চারটি স্বরের সাথে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে এ, , , ঔ যথাক্রমে অয়্, আয়্, অব্ এবং আব্ হয় ।

উদাহরণ :

নে + অন = নয়ন

 

এই উদাহরণটি বর্ণ বিশ্লেষণ করে দেখা যাক : 

 

ন্+  +  অ+ন্+অ  = ন্+অ+য়্+অ+ন্+অ

 

স্থূল বর্ণগুলি দেখলেই বোঝা যাবে, '' থেকে 'অয়্' হয়েছে। বাকি স্বরগুলির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

 

অন‍্য উদাহরণ : 

 

গৈ + অক = গায়ক

নৈ + অক = নায়ক

গো + আদি = গবাদি ( গবাদি মানে, গোরু ইত‍্যাদি)

নৌ + ইক = নাবিক

পো + ইত্র = পবিত্র

 

ব‍্যতিক্রম/ নিপাতনে সিদ্ধ : গো + অক্ষ = গবাক্ষ (সূত্রানুসারে গবক্ষ)
আর‌ও কয়েকটি নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধি :
শুদ্ধ+ওদন = শুদ্ধোদন
কুল+অটা = কুলটা
শার+অঙ্গ = শারঙ্গ
মার্ত+অণ্ড = মার্তণ্ড
প্র+ঊঢ় = প্রৌঢ়

ব‍্যঞ্জন সন্ধি : ব‍্যঞ্জন সন্ধির উদাহরণ সূত্র ও ব‍্যতিক্রম

ব‍্যঞ্জন‌সন্ধির সংজ্ঞা, ধারণা ও সূত্র

 

ব‍্যঞ্জনসন্ধি কাকে বলে?

 

স্বরে ব‍্যঞ্জনে, ব‍্যঞ্জনে স্বরে ও ব‍্যঞ্জনে ব‍্যঞ্জনে যে সন্ধি হয় তাকে ব‍্যঞ্জন‌সন্ধি বলে।

 

ব‍্যঞ্জন সন্ধির সূত্র‌গুলি আলোচনা করার সময় আমরা দেখতে পাবো, সন্ধির সময় আসলে ধ্বনিপরিবর্তন ঘটে। 
সূত্র ১: স্বর + ছ্ = ছ্>চ্ছ্

স্বরধ্বনির সাথে ছ্ যুক্ত হলে ছ্ থেকে চ্ছ্ হয় অর্থাৎ, একটি চ্-এর আগম ঘটে।

 

যেমন: 
তরু+ছায়া = তরুচ্ছায়া(উ+ছ্)

পরি+ছেদ = পরিচ্ছেদ(ই+ছ্)

উপ+ছায়া = উপচ্ছায়া(অ+ছ্)

পূর্ণ+ছেদ = পূর্ণচ্ছেদ

নদী+ছবি = নদীচ্ছবি
প্র+ছায়া = প্রচ্ছায়া
আ+ছাদন = আচ্ছাদন
মতি+ছন্ন = মতিচ্ছন্ন
মুখ+ছবি = মুখচ্ছবি
রবি+ছবি = রবিচ্ছবি
আলোক+ছটা = আলোকচ্ছটা

সূত্র ২: ত্/দ্ + চ্/ছ্ = ত্/দ্ > চ্

ত্ বা দ্-এর সাথে চ্ বা ছ্ যুক্ত হলে ত্ বা দ্ চ্-এ রূপান্তরিত হয়। এখানে আসলে সমীভবন হয়।

 

যেমন: 

উৎ+চারণ = উচ্চারণ

বিপদ্+চিন্তা = বিপচ্চিন্তা

উৎ+ছেদ = উচ্ছেদ

সূত্র ৩: ত্/দ্ + জ্/ঝ্ = ত্/দ্ > জ্

ত্ বা দ্-এর সাথে জ্ বা ঝ্ যুক্ত হলে ত্ বা দ্ পরিবর্তিত হয়ে জ্ হয়। এটিও সমীভবন।

 

যেমন:

বিপদ্+জাল = বিপজ্জাল

বিপদ্+জনক = বিপজ্জনক

মহৎ+ঝঞ্ঝা = মহজ্‌ঝঞ্ঝা

তৎ+জন‍্য = তজ্জন্য

কুৎ+ঝটিকা = কুজ্‌ঝটিকা

সূত্র ৪: ত্/দ্ + শ্ = ত্/দ্ > চ্  এবং শ্>

ত্ বা দ্-এর সাথে শ্ যুক্ত হলে ত্/দ্ স্থানে চ্ এবং  শ্ স্থানে ছ্ হয়। এটিও একধরনের সমীভবন।

যেমন:
উৎ+শ্বাস = উচ্ছ্বাস
উৎ+শ্বসিত = উচ্ছ্বসিত
মৃৎ+শকটিকা = মৃচ্ছকটিকা

সূত্র ৫: ত্/দ্ + হ্ = ত্/দ্ > দ্  এবং হ্>ধ্

ত্ বা দ্-এর সাথে হ্ যুক্ত হলে ত্ বা দ্ স্থানে দ্ হয় এবং হ্ স্থানে ধ্ হয়।

 

যেমন

উৎ+হার = উদ্ধার

তদ্+হিত = তদ্ধিত

সূত্র ৬: চ-বর্গ + ন্ = ন্>ঞ্

যেমন:

যাচ্+না = যাচ্ঞা

রাজ্+নী = রাজ্ঞী

যজ্+ন = যজ্ঞ

সূত্র ৭: ত্/দ্ + ট্/ঠ্ = ত্/দ্ > ট্

ত্ বা দ্-এর সাথে ট্ বা ঠ্ যুক্ত হলে ত্ বা দ্ বদলে গিয়ে ট্ হয়।

 

যেমন:

তদ্+টীকা = তট্টীকা

সূত্র ৮: ত্/দ্ + ড্/ঢ্ = ত্/দ্ > ড্

যেমন:

উৎ+ডীন = উড্ডীন

সূত্র ৯: ষ্ + ত্/থ্ = ত্>ট্ এবং থ্>ঠ্

ষ্-এর সাথে ত্ বা থ্ যুক্ত হলে ত্ থেকে হয় ট্ এবং থ্ থেকে হয় ঠ্।

 

যেমন:

বৃষ্+তি = বৃষ্টি

ষষ্+থ্ = ষষ্ঠ

সূত্র ১০: ত্/দ্ + ল্ = ত্/দ্ > ল্

ত্ বা দ্-এর সাথে ল্ যুক্ত হলে ত্ বা দ্ পরিবর্তিত হয়ে ল্ হয়। 

 

যেমন:

উৎ+লেখ = উল্লেখ

উৎ+লিখিত = উল্লিখিত

বৃহৎ+ললাট = বৃহল্ললাট

সূত্র ১১: ন্ + শ্/স্/হ্ = ন্>অনুস্বার(ং)

ন্-এর সাথে শ্,স্ বা হ্ যুক্ত হলে ন্ স্থানে অনুস্বার হয়।

 

যেমন:

দন্+শন = দংশন

জিঘান্+সা = জিঘাংসা

মীমান্+সা = মীমাংসা

বৃণ্+হতি = বৃংহতি

সূত্র ১২: ম্+ত্ = ম্>ন্

ম্-এর সাথে ত্ যুক্ত হলে ম্-স্থানে ন্ হয়। 

 

যেমন:

গম্+তব‍্য = গন্তব‍্য

নিয়ম্+তা = নিয়ন্তা

শাম্+ত = শান্ত

সূত্র ১৩: ম্+স্পর্শ‌ধ্বনি = ম্> অনুস্বার অথবা বর্গের শেষ ধ্বনি

ম্-এর সাথে যে কোনো স্পর্শধ্বনি যুক্ত হলে ম্-স্থানে অনুস্বার অথবা ঐ স্পর্শব‍্যঞ্জনের বর্গের শেষ ধ্বনি হয়।

 

যেমন:

কিম্+কর্তব‍্য = কিংকর্তব‍্য

কিম্+কর = কিংকর
শম্+কর = শংকর

সূত্র ১৪: উৎ + স্থা/স্তম্ভ্ = স লোপ

উৎ উপসর্গের সাথে স্থা বা স্তম্ভ ধাতু-জাত শব্দ যুক্ত হলে স্ লোপ পায়।

 

যেমন: 

উৎ+স্থান = উত্থান

উৎ+স্তম্ভ = উত্তম্ভ

উৎ+স্থাপন = উত্থাপন

সূত্র ১৫: ক্,চ্,ট্,প্ + স্বর/ঘোষ ব‍্যঞ্জন/য্,র্,ল্,ব্,হ্ = ক্,চ্,ট্,প্ > বর্গের তৃতীয় ব‍্যঞ্জন

ক্,চ্,ট্ বা প্-এর সাথে স্বরধ্বনি অথবা ঘোষধ্বনি অথবা য্,র্,ল্,ব্,হ্ যুক্ত হলে ক্,চ্,ট্,প্ স্থানে নিজ নিজ বর্গের তৃতীয় ব্যঞ্জন হয়।

 

যেমন:

ণিচ্+অন্ত = ণিজন্ত

বাক্+আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর

দিক্+গজ = দিগ্‌গজ 

সুপ্+অন্ত = সুবন্ত

প্রাক্+জ‍্যোতিষ = প্রাগ্‌জ‍্যোতিষ

বাক্+দত্তা = বাগ্‌দত্তা

সূত্র ১৬: ত্ + স্বর/গ্, ঘ্, দ্, ধ্, ব্, ভ্/য্, র্,ব = ত্>দ্

ত্-এর সাথে স্বরধ্বনি, গ্,ঘ্,দ্,ধ্,ব্,ভ্ অথবা য্,র্,ব্ যুক্ত হলে ত্-স্থানে দ্ হয়।

 

যেমন:

জগৎ+ঈশ্বর = জগদীশ্বর

উৎ+গত = উদ্গত

মহৎ+ভয় = মহদ্ভয়

বৃহৎ+রথ = বৃহদ্রথ

জগৎ+বন্ধু = জগদ্বন্ধু

সূত্র ১৭: বর্গের প্রথম ব‍্যঞ্জন + ন্/ম্ = প্রথম ব‍্যঞ্জন > পঞ্চম ব‍্যঞ্জন/তৃতীয় ব‍্যঞ্জন

বর্গের প্রথম ব্যঞ্জনের সাথে ন্ বা ম্ যুক্ত হলে প্রথম ব‍্যঞ্জনের স্থানে পঞ্চ‌ম ব‍্যঞ্জন বা তৃতীয় ব‍্যঞ্জন হয়।(বাংলায় বর্তমানে পঞ্চম ব‍্যঞ্জন‌ই প্রচলিত।)

 

যেমন:

দিক্+নাগ = দিঙ্‌নাগ / দিগ্‌নাগ (দ্বিতীয়‌টি বাংলায় অপ্রচলিত)

জগৎ+নাথ = জগন্নাথ / জগদ্‌নাথ (জগদ্‌নাথ অপ্রচলিত)

সূত্র ১৮: বর্গের প্রথম ব্যঞ্জন + মাত্র/ময় = প্রথম ব‍্যঞ্জন> পঞ্চম ব‍্যঞ্জন

বর্গের প্রথম ব্যঞ্জনের সাথে মাত্র বা ময় যুক্ত হলে প্রথম ব্যঞ্জনের স্থানে পঞ্চম ব‍্যঞ্জন হয়।

 

যেমন:

কিঞ্চিৎ+মাত্র = কিঞ্চিন্মাত্র (ৎ মানে ত্)

বাক্+ময় = বাঙ্ময়

চিৎ+ময় = চিন্ময়

অপ্+ময় = অম্ময়

সূত্র ১৯: বর্গের ২য়, ৩য়, ৪র্থ ব‍্যঞ্জন + বর্গের ১ম,২য় ব‍্যঞ্জন / শ্,ষ্,স্ = ২য়,৩য়,৪র্থ ব‍্যঞ্জন > ১ম ব‍্যঞ্জন

বর্গের ২য়, ৩য়, ৪র্থ ব‍্যঞ্জনের সাথে বর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় ব‍্যঞ্জন অথবা শিস ধ্বনি যুক্ত হলে ২য়,৩য়,৪র্থ ব‍্যঞ্জনের স্থানে প্রথম ব্যঞ্জন হয়।

 

যেমন:

বিপদ্+কাল = বিপৎকাল

ক্ষুধ্+পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা

ক্ষুধ্+কাতর = ক্ষুৎকাতর

সূত্র ২০: সম্ + কৃ ধাতুজাত শব্দ = স্-এর আগম ও ম্> অনুস্বার 

সম্ উপসর্গের সাথে কৃ-ধাতুজাত শব্দ যুক্ত হলে ম্ হয় অনুস্বার এবং একটি স্-এর আগম ঘটে।

 

যেমন:

সম্+কার = সংস্কার

সম্+কৃত = সংস্কৃত

সূত্র ২১: পুম্ + বর্গের প্রথম/দ্বিতীয় ব‍্যঞ্জন = ম্ > অনুস্বার এবং শ্ বা স্ আগম

পুম্ শব্দের সাথে বর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় ব‍্যঞ্জন যুক্ত হলে ম্ হয় অনুস্বার এবং শ্ বা স্-এর আগম ঘটে।

 

যেমন: পুম্+কোকিল = পুংস্কোকিল

পুম+চাতক = পুংশ্চাতক

পুম্+চকোর = পুংশ্চকোর

পুম্+চালিত = পুংশ্চালিত

ব‍্যঞ্জন-সন্ধির ব‍্যতিক্রম

কতকগুলি ব‍্যঞ্জন‌সন্ধি সূত্র অনুসারে হয় না। এই রূপ সন্ধিকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলা হয়। নিচের সন্ধিগুলি নিপাতনে সিদ্ধ।

 

 

হরি+চন্দ্র = হরিশ্চন্দ্র

পতৎ+অঞ্জলি = পতঞ্জলি

বন+পতি = বনস্পতি

তৎ+কর = তস্কর

দিব্+লোক = দ‍্যুলোক

আ+চর্য = আশ্চর্য

বৃহৎ+পতি = বৃহস্পতি

 

Rajesh Konwar

Author & Editor

Has laoreet percipitur ad. Vide interesset in mei, no his legimus verterem. Et nostrum imperdiet appellantur usu, mnesarchum referrentur id vim.

0 comments:

Post a Comment