Wednesday, 8 October 2025

সাগর সঙ্গমে নবকুমার

SEBA CLASS X BENGALI SOLUTION, SEBA CLASS X BENGALI QUESTIONS AND ANSWERS, সাগর সঙ্গমে নবকুমার,

SEBA CLASS - X


'সাগর সঙ্গমে নবকুমার' পাঠের সারাংশ

নবকুমার নামে এক ব্রাহ্মণ যুবক গঙ্গাসাগরে তীর্থযাত্রার জন্য একদল নৌকাযাত্রীর সঙ্গে গিয়েছিলেন  রসুলপুরের কাছে ঘন বনে কাঠ সংগ্রহের জন্য তিনি একা নদীতীরে নামেন। কাঠ সংগ্রহ করে ফিরে এসে তিনি দেখেন তাঁর নৌকা আর যাত্রীরা কেউ নেই জোয়ারের তোড়ে নৌকা ভেসে গেছে, নাকি সঙ্গীরা তাঁকে নির্জন সমুদ্রতীরে পরিত্যাগ করে গেছে, প্রথমে তিনি বুঝতে পারলেন না 

অন্ধকার নেমে এলে নবকুমার অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়লেন। চারদিকে জনমানবশূন্য, থাকার বা শীত নিবারণের কোনো আশ্রয় নেই, পানীয় জল নেই, এবং বাঘ-ভল্লুকের ভয় ক্ষুধাতৃষ্ণা পরিশ্রমে কাতর হয়ে তিনি এক বালিয়াড়ির পাশে পিঠ দিয়ে বসে ঘুমিয়ে পড়লেন 

গভীর রাতে তাঁর ঘুম ভাঙলে তিনি দূরে একটি আলোকবিন্দু দেখতে পান। জীবন রক্ষার আশায় তিনি সেই আলোর দিকে এগিয়ে যান  সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, একটি অত্যুচ্চ বালুকাস্তূপের ওপর এক ভীষণ-দর্শন কাপালিক অগ্নি জ্বালিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে আছেন কাপালিকটি এক ছিন্নশীর্ষ গলিত শবের ওপর বসে তন্ত্রসাধনা করছিলেন, যা দেখে নবকুমারের শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে 

কাপালিক ধ্যান ভেঙে নবকুমারকে তাঁর সঙ্গী হতে বলেন। নবকুমার ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর ছিলেন, তাই কাপালিকের নির্দেশমতো তাঁর পর্ণকুটিরে (পাতার তৈরি কুঁড়েঘর) আশ্রয় নেন  কাপালিক তাঁকে ফলমূল জল দেন, যা খেয়ে নবকুমার পরম পরিতোষ লাভ করেন 

পরের দিন কাপালিককে দেখতে না পেয়ে নবকুমার ফল সংগ্রহের জন্য বের হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। সন্ধ্যার সময় সমুদ্রের তীরে তাঁর সঙ্গে এক অপূর্ব সুন্দরী রমণীর দেখা হয়  রমণীটি নবকুমারকে জিজ্ঞাসা করেন, "পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?" পরে তিনি নবকুমারকে তাঁর কুটিরে পৌঁছে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান  এই রমণীই হলেন কপালকুণ্ডলা 

এরপর সন্ধ্যায় কাপালিক ফিরে আসেন এবং নবকুমারকে তাঁর সঙ্গে আসতে বলেন নবকুমার বুঝতে পারেন যে তিনি হয়তো মৃত্যুর মুখে আছেন  ঠিক সেই সময়, বন্যদেবীমূর্তি কপালকুণ্ডলা হঠাৎ তাঁর পেছনে এসে কানে কানে তাঁকে 'পলায়ন কর' বলে সাবধান করে দেন  একই সঙ্গে কপালকুণ্ডলা কাপালিকের খড়্গ (তলোয়ার) সুকৌশলে অপহরণ করে নবকুমারের প্রাণ রক্ষা করেন 

শেষে নবকুমারকে সঙ্গে নিয়ে কপালকুণ্ডলা পালিয়ে যান, এবং এর পরেই তাঁদের বিবাহ হয়  

 

১. নবকুমার কোথায় এবং কেন গিয়েছিলেন?

উত্তর: নবকুমার গঙ্গাসাগরে তীর্থযাত্রার জন্য একদল নৌকাযাত্রীর সঙ্গে গিয়েছিলেন।

২. সঙ্গীরা নবকুমারকে কোথায় পরিত্যাগ করে গিয়েছিল?

উত্তর: সঙ্গীরা নবকুমারকে রসুলপুরের কাছে ঘন বনে কাঠ সংগ্রহের জন্য নামার পর নির্জন সমুদ্রতীরে পরিত্যাগ করে চলে গিয়েছিল।

৩. নির্জন বালুকাময় স্থানে নবকুমার কী ধরনের বিপদের আশঙ্কা করেছিলেন?

উত্তর: নির্জন সমুদ্রতীরে নবকুমার পানীয় জলের অভাব, প্রচণ্ড ঠান্ডা এবং বাঘ-ভল্লুকের মতো হিংস্র পশুর আক্রমণের ভয় পেয়েছিলেন।

৪. নবকুমার রাতে ঘুম ভেঙে কী দেখতে পেয়েছিলেন?

উত্তর: গভীর রাতে ঘুম ভেঙে নবকুমার দূরে একটি আলোকবিন্দু দেখতে পেয়েছিলেন।

৫. কাপালিককে নবকুমার কোন অবস্থায় দেখেছিলেন?

উত্তর: নবকুমার একটি বালুকাস্তূপের ওপর ভীষণ-দর্শন কাপালিককে অগ্নি জ্বালিয়ে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দেখেছিলেন। কাপালিক একটি ছিন্নশীর্ষ গলিত শবের ওপর বসে তন্ত্রসাধনা করছিলেন।

৬. পথে নবকুমারের সঙ্গে কার দেখা হয়েছিল?

উত্তর: নবকুমার ফল সংগ্রহের জন্য বের হয়ে পথ হারিয়ে ফেললে সন্ধ্যার সময় সমুদ্রের তীরে তাঁর সঙ্গে কপালকুণ্ডলা নামে এক অপূর্ব সুন্দরী রমণীর দেখা হয়েছিল।

৭. কপালকুণ্ডলা কীভাবে নবকুমারের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন?

উত্তর: কাপালিক যখন নবকুমারকে বলি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখন কপালকুণ্ডলা তাঁর পেছনে এসে কানে কানে 'পলায়ন কর' বলে সাবধান করে দেন এবং একই সঙ্গে কাপালিকের খড়্গটি অপহরণ করে নবকুমারের প্রাণ রক্ষা করেন।

৮. 'বালিয়াড়ি' কাকে বলে?

উত্তর: সমুদ্র বা নদীর তীরে বালুকার স্তূপশ্রেণীকে 'বালিয়াড়ি' বলা হয়। এটি দেখতে বালুকাময় ক্ষুদ্র পর্বতশ্রেণীর মতো।

৯. নবকুমার কেন নদীতীরে নেমেছিলেন?

উত্তর: নবকুমার নদীতীরে নেমেছিলেন জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করার জন্য।

১০. নৌকাযাত্রীরা চলে যাওয়ার পর নবকুমারের প্রথম প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

উত্তর: সঙ্গীরা চলে যাওয়ার পর নবকুমারের অকস্মাৎ অত্যন্ত ভয়সঞ্চার হয়েছিল। তিনি বুঝতে পারেননি, নৌকা ভেসে গেছে নাকি সঙ্গীরা তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করেছে।

১১. নবকুমার কোথায় এবং কেন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন?

উত্তর: ক্ষুধাতৃষ্ণা ও পরিশ্রমে কাতর হয়ে নবকুমার একটি বালিয়াড়ির পাশে পিঠ দিয়ে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

১২. কাপালিক কোথায় বসে সাধন করতেন?

উত্তর: কাপালিক একটি অত্যুচ্চ বালুকাস্তূপের ওপর অগ্নি জ্বালিয়ে এবং একটি ছিন্নশীর্ষ গলিত শবের ওপর বসে তন্ত্রসাধনা করতেন।

১৩. কাপালিক নবকুমারকে তাঁর কুটিরে কী খেতে দিয়েছিলেন?

উত্তর: কাপালিক নবকুমারকে তাঁর পর্ণকুটিরে ফলমূলজল খেতে দিয়েছিলেন।

১৪. পথ হারিয়ে নবকুমার যখন কপালকুণ্ডলার দেখা পান, তখন কপালকুণ্ডলা তাঁকে কী জিজ্ঞাসা করেছিলেন?

উত্তর: কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?"

১৫. কপালকুণ্ডলা কী অপহরণ করে নবকুমারকে রক্ষা করেছিলেন?

উত্তর: কপালকুণ্ডলা কাপালিকের খড়্গ বা তলোয়ার সুকৌশলে অপহরণ করে নবকুমারকে রক্ষা করেছিলেন।

১৬. নবকুমারকে যে স্থানে পরিত্যাগ করা হয়েছিল, বর্তমানে সেখানে কী দেখা যায়?

উত্তর: যে স্থানে নবকুমারকে পরিত্যাগ করা হয়েছিল, তার অনতিদূরে বর্তমানে দৌলতপুর ও দরিয়াপুর নামে দুটি ছোট গ্রাম দেখা যায়।

১৭. বালিয়াড়ির ধবল শিখরমালা মধ্যাহ্নসূর্যকিরণে কেমন দেখায়?

উত্তর: বালিয়াড়ির ধবল শিখরমালা মধ্যাহ্নসূর্যকিরণে দূর থেকে অপূর্ব প্রভাবিশিষ্ট দেখায়।

১৮. বালিয়াড়ির স্তূপতলে প্রধানত কী ধরনের গাছ জন্মায়?

উত্তর: বালিয়াড়ির স্তূপতলে সামান্য ক্ষুদ্র বন জন্মায়, যার মধ্যে ঝাঁটি, বন-ঝাউ এবং বনপুষ্পই অধিক।

১৯. নবকুমারের প্রথমে কী সন্দেহ হয়েছিল?

উত্তর: নবকুমার প্রথমে সন্দেহ করেছিলেন যে, জোয়ারের তোড়ে তাঁর নৌকা ভেসে গেছে, নাকি সঙ্গীরা তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে গেছে।

২০. কাপালিককে দেখে নবকুমারের কী অনুভূতি হয়েছিল?

উত্তর: ভীষণ-দর্শন কাপালিককে একটি ছিন্নশীর্ষ শবের ওপর সাধন করতে দেখে নবকুমারের শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল (ভীতির সঞ্চার হয়েছিল)।

২১. কাপালিকের কুটিরটি কেমন ছিল?

উত্তর: কাপালিকের কুটিরটি ছিল পর্ণকুটির বা পাতার তৈরি একটি কুঁড়েঘর।

২২. কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে কুটিরে পৌঁছে দিয়ে কী করেছিলেন?

উত্তর: কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে তাঁর কুটিরে পৌঁছে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন।

২৩. নবকুমারকে বলি দেওয়ার জন্য কাপালিক কখন প্রস্তুত হয়েছিলেন?

উত্তর: কাপালিক সন্ধ্যায় ফিরে এসে নবকুমারকে তাঁর সঙ্গে আসতে বলেছিলেন এবং সম্ভবত তখনই তাঁকে বলি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন।

'সাগর সঙ্গমে নবকুমার' পাঠ্যাংশের প্রশ্ন ও উত্তর

১. নবকুমারকে কেন এবং কোথায় সঙ্গীরা পরিত্যাগ করেছিল?

উত্তর: নবকুমারকে তাঁর সঙ্গীরা জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করার জন্য নদীতীরে নামিয়েছিল। নবকুমার কাঠ সংগ্রহ করে ফিরে এসে দেখেন, তাঁর নৌকা এবং যাত্রীরা কেউ নেই। রসুলপুরের কাছে নির্জন বালুকাময় সমুদ্রতীরে তাঁকে পরিত্যাগ করে তারা চলে গিয়েছিল। 

২. নির্জন সমুদ্রতটে নবকুমারের অসহায় অবস্থার বর্ণনা দাও।

উত্তর: সঙ্গীরা চলে যাওয়ার পর নবকুমার এক ভয়াবহ এবং অসহায় পরিস্থিতিতে পড়েন। চারদিকে জনমানবশূন্য, গভীর অরণ্যময় পরিবেশ। তাঁর অকস্মাৎ অত্যন্ত ভয়সঞ্চার হয়। থাকার বা শীত নিবারণের কোনো আশ্রয় ছিল না। তীব্র ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় তিনি কাতর হয়ে পড়েছিলেন। স্থানটি ছিল বাঘ-ভল্লুকের মতো হিংস্র পশুর উপদ্রবপূর্ণ, ফলে প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল। অন্ধকার নেমে এলে সেই নির্জনতা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। অসহায় অবস্থায় তিনি কোনো উপায় না দেখে এক বালিয়াড়ির পাশে পিঠ দিয়ে বসে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েন।

৩. কাপালিকের সাধনাস্থলের এবং তাঁর চেহারার একটি চিত্র দাও।

উত্তর: নবকুমার রাতে আলো দেখে কাপালিকের যে স্থানে উপনীত হয়েছিলেন, সেটি ছিল একটি অত্যুচ্চ বালুকাস্তূপের উপর। স্থানটি ছিল অগ্নি প্রজ্বলিত, এবং সাধনাস্থলে তন্ত্রসাধনার উপকরণ হিসাবে একটি ছিন্নশীর্ষ গলিত শব রাখা ছিল।

 কাপালিক ছিলেন ভীষণ-দর্শন (ভয়ঙ্কর দেখতে)। তিনি সেই শবের উপর বসে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ছিলেন। তাঁর এই বেশ এবং সাধন পদ্ধতি দেখে নবকুমারের শরীরে ভয়ে কাঁটা দিয়েছিল।

Rajesh Konwar

Author & Editor

Has laoreet percipitur ad. Vide interesset in mei, no his legimus verterem. Et nostrum imperdiet appellantur usu, mnesarchum referrentur id vim.

0 comments:

Post a Comment