Wednesday, 4 June 2025

ধূলামন্দির

"ভজ ন পূজন সাধন আরাধনা সমস্ত থাকে পড়ে" ‘রুদ্ধদ্বারে দেবালয়ের কোণে কেন আছিস ওরে!’ SEBA CLASS IX BENGALI

ধূলামন্দির

ধূলামন্দির


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ধুলামন্দির' কবিতাটি 'গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত এবং এটিতে ভারতীয় আধ্যাত্মিকতাবাদ সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে

·   ঐতিহ্যগত ভক্তির প্রত্যাখ্যান: কবি সেই পূজারীকে তিরস্কার করছেন যিনি লোকচক্ষুর আড়ালে, রুদ্ধদ্বারের মন্দিরের কোণে, নির্জনে উপাসনা, ভজন, সাধনায় মগ্ন কবি বলছেন, চোখ মেলে দেখো, মন্দিরের ভিতরে দেবতা নেই

·    ঈশ্বরের অবস্থান: কবির মতে, ভগবান বা ঈশ্বর কোনো ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে বা মন্দিরের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন তিনি সর্বত্র বিরাজমান তিনি আছেন সেই খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে, যারা মাটি ভেঙে চাষ করছে, পাথর ভেঙে রাস্তা কাটছে, এবং বারো মাস কঠোর পরিশ্রম করছে ঈশ্বর রৌদ্রে-জলে সবার সাথে আছেন, তাঁর দুই হাতেও লেগেছে ধুলা

·      প্রকৃত ধর্ম মুক্তি: ভক্তরা ভগবানের সান্নিধ্য লাভের জন্য ভজন, পূজন এবং সাধনা করেন কিন্তু কবির মতে, মুক্তির সন্ধান বৃথা কারণ ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টিবন্ধন গ্রহণ করে সবার কাছে বাঁধা আছেন তাই, ধ্যান করা বা ফুলের ডালি সাজিয়ে পূজা করার কোনো সার্থকতা নেই

·    আহ্বান: কবি পূজারীকে তাঁর শুচি বসন (পবিত্র পোশাক) ত্যাগ করে , ধুলার ওপর নেমে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন কর্মই ধর্ম ধুলিমাখা হাতে, সবার সঙ্গে এক হয়ে কর্মযোগে ঘর্ম ঝরানোর মাধ্যমেই প্রকৃত ঈশ্বর-প্রাপ্তি সম্ভব

 

শুদ্ধ উত্তরটি বেছে বের করো।

() প্রকৃত পক্ষে দেবতার আবাস কোথায়?

উত্তর -  সর্বত্র

() ঈশ্বর কার কাছে বাঁধা থাকেন?

উত্তর -  সৃষ্টির কাছে

() কবির মতে প্রকৃত ধর্ম কী?

উত্তর -   কর্ম

() ঈশ্বরের দু'হাতে কী লেগে থাকে বলে কবি বলেছেন?

উত্তর -  ধুলা

() কবি পূজারিকে কী ছেড়ে ধুলার পরে আসতে বলেছেন?

উত্তর -  শুচিবসন

 শূন্যস্থান পূর্ণ করো।

() ভজন পূজন সাধন আরাধনা সমস্ত থাক্ পড়ে

() কাহারে তুই পূজিস সংগোপনে

() কর্মযোগে তাঁর সাথে এক হয়ে ঘর্ম পড়ুক ঝরে।

() আপনি প্রভু সৃষ্টিবাঁধন 'রে বাঁধা সবার কাছে।

() ছিঁডুক বস্ত্র লাগুক ধুলাবালি

 অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন।

() 'ধুলামন্দির' কবিতার কবি কে?

উত্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

() কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?

উত্তর - কবিতাটি কবির 'গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

() প্রকৃতপক্ষে দেবতার বা ঈশ্বরের বাস কোথায়?

উত্তর - প্রকৃতপক্ষে দেবতা বা ঈশ্বরের বাস সর্বত্র তিনি আপামর খেটে খাওয়া মানুষের কর্মের মধ্যেও আছেন

() ভক্তরা ভজনা বা পূজার্চনা করেন কেন?

উত্তর - ভক্তরা ভজনা, পূজন বা পূজার্চনা করেন ভগবানের সান্নিধ্য লাভ করার জন্য।

() প্রকৃত ধর্ম কী?

উত্তর - কবির মতে কর্মই প্রকৃত ধর্ম।

() কবির মতে দেবতা আসলে কোথায় থাকেন?

উত্তর - কবির মতে দেবতা আসলে সেইসব স্থানে থাকেন যেথায় মাটি ভেঙে চাষা চাষ করছে, পাথর ভেঙে পথ কাটছে এবং বারো মাস খাটছে

() ঈশ্বর বা প্রভু কাহার নিকট বাঁধা থাকেন?

উত্তর - ঈশ্বর বা প্রভু সৃষ্টিবাঁধন পরে সবার কাছে বাঁধা থাকেন।

 সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন।

() কবিতায় কবি ভগবান বা দেবতাকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে বলে প্রকাশ করেছেন?

উত্তর - কবি কবিতায় ভগবান বা দেবতাকে মন্দিরের রুদ্ধদ্বারে নয় , বরং বাস্তব পৃথিবীতে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কর্মের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে বলে প্রকাশ করেছেন তিনি সেইসব স্থানে আছেন যেথায় চাষা মাটি ভেঙে চাষ করছে, যেথায় পাথর ভেঙে পথ কাটা হচ্ছে তিনি রৌদ্রে-জলে সবার সাথে কাজ করছেন এবং তাঁর দুই হাতে ধুলা লেগে আছে

 

() কবির মতে মুক্তির উপায় কী বর্ণনা করো?

উত্তর - কবি বলেছেন মুক্তি কোথাও নেই কারণ ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টিবাঁধন পরে সবার কাছে বাঁধা আছেন তাই নিছক ধ্যান বা পূজার্চনায় মুক্তি লাভ সম্ভব নয় কবির মতে মুক্তির প্রকৃত উপায় হলো:

·         কর্মযোগ: শুচি বসন ত্যাগ করে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের কাতারে নেমে আসা

·   ঘর্ম ঝরানো: ধুলিমাখা হাতে কর্মযোগে তাঁর সাথে এক হয়ে ঘর্ম ঝরানোর মাধ্যমেই ঈশ্বরপ্রাপ্তি সম্ভব, আর এটাই প্রকৃত মুক্তি

() কর্মযোগ বলতে কী বুঝায়? কর্মের প্রকৃত অর্থ কী?

উত্তর - কর্মযোগ বলতে বোঝায় নিষ্কামভাবে, অর্থাৎ ফলের আশা না করে কর্তব্য সম্পাদন করা 'ধুলামন্দির' কবিতায় কর্মযোগ বলতে কবি বুঝিয়েছেনঈশ্বরের মতো খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সৃষ্টিকাজ করা এই কর্মের মাধ্যমেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায় কবির মতে কর্মের প্রকৃত অর্থ হলোমানস চক্ষু দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুভব করা , শ্রমজীবী মানুষের কাজে লীন হয়ে থাকা , এবং ধুলাবালি মেখে ঘর্ম ঝরিয়ে বাস্তব পৃথিবীতে মানুষের সেবার মাধ্যমে জগৎসংসারের মঙ্গলসাধন করা

() রুদ্ধ দেবালয়ে দেবতা থাকেন কী? কেন?

উত্তর - কবির মতে, রুদ্ধ দেবালয়ে দেবতা থাকেন না কারণ দেবতা বা ঈশ্বর কোনো ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে বা মন্দিরের চার দেয়ালের মধ্যে বদ্ধ হয়ে থাকতে পারেন না তিনি সর্বত্রই বিরাজমান , বিশেষত তিনি খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কর্মের মধ্যে রৌদ্রে-জলে সবার সাথে আছেন তাই রুদ্ধদ্বার মন্দিরে ফুল-চন্দন দিয়ে তাঁর পূজা করা যৌক্তিক নয় এবং নিষ্ফল

() কবির মতে দেবতা প্রাপ্তির প্রকৃত উপায় কী?

উত্তর - কবির মতে দেবতা প্রাপ্তির প্রকৃত উপায় হলো:

·         ভজন-পূজন ত্যাগ: ধ্যান ফুলের ডালি ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতা ত্যাগ করা

·     কর্মযোগে অংশগ্রহণ: শুদ্ধ বসন ত্যাগ করে ধুলার ওপর নেমে এসে শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে এক হয়ে কর্মযোগে অংশ নেওয়া

·     ঘর্ম ঝরানো: ধুলিমাখা হাতে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ঘর্ম ঝরানোর মাধ্যমেই দেবতার সান্নিধ্য লাভ সম্ভব

 

'ধুলামন্দির' কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

উত্তর - 'ধুলামন্দির' নামকরণের মূল সার্থকতা হলোমন্দিরের প্রতি প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দেওয়া 'ধুলো' এখানে প্রতীকী অর্থে শ্রম, কর্ম, সাধারণতা বাস্তব পৃথিবীর প্রতীক আর 'মন্দির' হলো ঈশ্বরের আবাস কবি বলেছেন, দেবতা মন্দিরের বদ্ধ কোঠায় নেই তিনি খেটে-খাওয়া মানুষের সাথে, মাটি-পাথর-ধুলাবালির মাঝে কর্মে লীন হয়ে আছেন তাই আসল মন্দির হলো এই ধূলিময় কর্মক্ষেত্র, যেখানে ভগবান সবার সাথে ঘাম ঝরাচ্ছেন এই নামকরণের মাধ্যমে কবি ঐতিহ্যগত ভক্তির চেয়ে কর্মকেই শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাই নামকরণটি অত্যন্ত সার্থক তাৎপর্যপূর্ণ

 টীকা লেখো।

মন্দির

মন্দির হলো দেবতার আলয় বা গৃহ এটি হলো সেই স্থান, যেখানে মানুষ ভজন, পূজন, সাধন আরাধনার মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে চায়। 'ধুলামন্দির' কবিতায় কবি রুদ্ধদ্বারের দেবালয়ের পরিবর্তে শ্রমজীবী মানুষের কর্মক্ষেত্রকেই প্রকৃত মন্দির বা 'ধুলামন্দির' বলেছেন

মুক্তি

সাধারণভাবে 'মুক্তি' শব্দের অর্থ হলো উদ্ধার বা বন্ধন থেকে নিষ্কৃতি আধ্যাত্মিক অর্থে মুক্তি বলতে বোঝায় জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি বা মোক্ষ লাভ। কিন্তু 'ধুলামন্দির' কবিতায় কবি বলেছেন, "মুক্তি? ওরে মুক্তি কোথায় পাবি, মুক্তি কোথায় আছে?" কারণ ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টিবাঁধন পরে সবার কাছে বাঁধা কবির মতে, প্রচলিত অর্থে মুক্তি খোঁজা বৃথা। প্রকৃত মুক্তি হলো কর্মযোগে , মানুষের সাথে এক হয়ে কঠোর পরিশ্রম করে ঘর্ম ঝরানোর মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে লীন হয়ে যাওয়া

কর্মযোগ

'কর্মযোগ' বলতে বোঝায় কর্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া গীতায় বলা হয়েছে, এটিই শ্রেষ্ঠ যোগ 'ধুলামন্দির' কবিতায় কর্মযোগের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, নিষ্কামভাবে, ফল বা মুক্তির আশা না করে ঈশ্বরকে অনুসরণ করে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা অর্থাৎ, ভজন-পূজন ছেড়ে শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-কষ্টে একাত্ম হয়ে ঘাম ঝরিয়ে কাজ করা, যা কবি মতে ঈশ্বর প্রাপ্তির প্রকৃত পথ

 

Rajesh Konwar

Author & Editor

Has laoreet percipitur ad. Vide interesset in mei, no his legimus verterem. Et nostrum imperdiet appellantur usu, mnesarchum referrentur id vim.

0 comments:

Post a Comment